নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমান ভূরাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তার ‘ফায়ারপাওয়ার’ তথা যুদ্ধক্ষমতা বাড়িয়ে চলেছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলো নিজেদেরকে ব্যাপকভাবে সামরিকীকরণ করেছে। তারা এমনকি মানব ও অর্থনৈতিক উন্নয়কে বাদ দিয়ে ব্যাপক ধ্বংসাত্মক অস্ত্র (ডব্লিউএমডি) লাভসহ আক্রমণাত্মক সামরিক শক্তি অর্জনের জন্য বিনিয়োগ করছে। তাদের এই তৎপরতা বাংলাদেশের মতো শান্তিকামী দেশগুলোর জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মিয়ানমারের বর্বর সামরিক শাসক গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক তৎপরতার কারণে বাংলাদেশকেও বড় ধরনের সমস্যার মধ্যে পড়তে হয়েছে। ২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর শুদ্ধি অভিযানে ১০ লাখের বেশি সেদেশের নাগরিক বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এই সমস্যার মোকাবেলা করছে মানবিক উপায়ে। আগতদের আশ্রয়, খাবার, চিকিৎসা ও শিক্ষা দিচ্ছে। অথচ এরা বাংলাদেশের জন্য ব্যাপক পরিবেশগত ও নিরাপত্তাগত সমস্যা তৈরি করেছে।
মিয়ানমারের নাগরিকদের সেদেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলের একটি অংশের চাপের কারণে এই চেষ্টা সফল হচ্ছে না। ওই অংশটি বাংলাদেশের এই সঙ্কটকে দীর্ঘয়িত করে ফায়দা লুটতে চাচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহলের এই কপট চরিত্রের কারণে মিয়ানমারও আগের চেয়ে বেশি সাহসী হয়ে উঠছে। এরই মধ্যে তারা চীন ও ভারতের কাছ থেকে সামরিক সরঞ্জাম লাভ করেছে, যা এই অঞ্চলে আরো উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে।
তাই কূটনৈতিক কোন সমাধান না পেয়ে বাংলাদেশও তার সামরিক সামর্থ্য ব্যাপকভাবে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই অঞ্চলের যুদ্ধংদেহী দেশগুলোকে মোকাবেলা করার এটাই একমাত্র কার্যকর সমাধান। গত ৭ অক্টোবর কুমিল্লা সেনানিবাসে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ জানান যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দূরপাল্লার রকেট ও মিসাইল সিস্টেম কিনেছে।
১৫৫ মিলিমিটার কামান ও অ্যাডভান্সড মর্টার সিস্টেম সংগ্রহ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত বছর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী টিআরজি-৩০০ জিএমএলআরএস (টিগার সারফেস-টু-সারফেস ট্যাকটিক্যাল মিসাইল সিস্টেম) কেনার জন্য রকেটসানের সঙ্গে বড় ধরনের চুক্তি করেছে। সেনাবাহিনী শিগগিরই এগুলো হাতে পাবে।
তিনটি নতুন আর্টিলারি ব্রিগেড ও একটি নতুন মর্টার ব্রিগেড সৃষ্টি করা হয়েছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিমান প্রতিরক্ষা সামর্থ্য বৃদ্ধি করতে মাঝারিপাল্লার সারফেস-টু-এয়ার (স্যাম) মিসাইল সিস্টেম, ওয়েরলিকন জিডিএফ-০০৯ বিমানবিধ্বংসী কামান, ফ্রান্স থেকে ভ্রাম্যমাণ এয়ার সার্ভেইল্যান্স রাডার সিস্টেম ও কাঁধে বহনযোগ্য বিমান প্রতিরক্ষা অস্ত্র কেনা হয়েছে। প্রধানত ইউরোপ, তুরস্ক ও চীন থেকে বহু ধরনের আধুনিক সমরাস্ত্র সংগ্রহের মাধ্যমে এভিয়েশেন, আর্মার, ইঞ্জিনিয়ারিং, সিগন্যালসহ সেনাবাহিনীর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ শাখার শক্তি বাড়ানো হচ্ছে।