১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন ছিল সূচনা মাত্র
রহমতুল্লাহ ঢাকার এক রিক্সাওয়ালা। করাইল বস্তিতে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে থাকে। বরিশালের মুলাদিতে গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধ বাবা-মাকেও তাকে দেখতে হয়। রিক্সার সিটে বসে জিরিয়ে নিচ্ছিল সে। প্রখর রোদ ও কঠোর পরিশ্রমের পরও তার মুখে হাসি।
রহমতুল্লাহর মুখে হাসি কেন? কারণ সে বাবা-মাকে ২,০০০ টাকা পাঠিয়েছে। তাকে বাড়ি গিয়ে দিয়ে আসতে হয়নি। তাহলে তাকে আরো সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হতো। তখন আরো কষ্ট হতো। বিকাশে টাকা পাঠিয়েছে সে।
বিকাশ হলো বিশ্বের সবচেয়ে বড় এনজিও ব্রাকের একটি সাবসিডিয়ারি, যা অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটিয়েছে। বিকাশের মাধ্যমে দেশের ভেতর টাকা আদান-প্রদান, মোবাইল রিচার্য, বিভিন্ন বিল দেয়া যায়। ফরচুন ম্যাগাজিনের ‘চেঞ্জ দ্য ওয়ার্ল্ড’ তালিকায় শীর্ষ ৫০ কোম্পানির মধ্যে বিকাশের নাম রয়েছে। প্রতিদিন বিকাশের মাধ্যমে ৫০ লাখ লোক আর্থিক লেনদেন করে।
সাংবাদিক পারভিন আক্তার থাকে রাজধানীর উত্তরায়। কারওয়ান বাজারে তার অফিস। দূরত্ব ও যানজট মিলিয়ে তাকে অফিসে পৌছাতে দুই ঘন্টা লাগে। তার সময় নেই। তাকে এক রাজনীতিকের সাক্ষাতকার নিতে এক ঘন্টার মধ্যে অফিসে যেতে হবে। অনেক যিনি কিনা পিড়াপিড়ির পর সাক্ষাতকার দিতে রাজি হয়েছেন। ফলে সুযোগ হারানো চলবে না। সে মোবাইলে পাঠাও কল করে। তিন মিনিটের মধ্যে একটি মটরবাইক দরজায় হাজির। আর ঢাকার যানজট পাশ কাটিয়ে ৪০ মিনিটে সে অফিসে পৌছে যায়। ভাড়াও বেশ সহনীয়। রহমতুল্লাহর মতো পারভিনের মুখেও হাসি।
পাঠাও হলো বাংলাদেশের চাহিবা-মাত্র ডিজিটাল রাইড শেয়ারিং প্লাটফর্ম। তিনটি শহরে এই সেবা পাওয়া যায়: ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে। নেপালের কাঠমান্ডুতেও সেবাদান শুরু করেছে পাঠাও। বাংলাদেশের উঠতি তরুণদের কর্মসংস্থান করছে এটি।
এগুলো হলো বাংলাদেশের অগ্রযাত্রার কয়েকটি উদাহরণ। বন্যা, সাইক্লোন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও গরিবের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি এখন অতীতের ইতিহাস। স্বাধীনতার পর ৫০ বছরে দেশটি অনেক দূর এগিয়ে গেছে। সফলতার গল্প অনেক ও বৈচিত্রপূর্ণ। অনেক অসুবিধার পরও বহু কিছু নিয়ে গর্ব করতে পারে বাংলাদেশ। পারে বিশ্বে তার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে।
বাংলাদেশের রিজার্ভে অভিবাসী শ্রমিকদের অবদানও বিপুল। সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ এবং বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশী অভিবাসী শ্রমিকরা নিজেদেরকে দুর্দান্ত শ্রমশক্তি হিসেবে প্রমাণ করেছে, তারা বাংলাদেশকে মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে নিচ্ছে।
বাংলাদেশের শিল্পপতি ও উদ্যোক্তারাও তাদের শক্তিমত্তা জানান দিচ্ছে। রফতানিমুখি গার্মেন্ট শিল্প, ওষুধ, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও আরো অনেক কিছুতে বাংলাদেশ ক্রমাগত নতুন উচ্চতায় উঠছে।
দেশটিকে প্রতিবেশী ‘বিগব্রাদার’ ভারতের ছায়া থেকে বেরিয়ে আসতে দেখা একজন বাংলাদেশীর জন্য আত্মতৃপ্তির বিষয়। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষিতের হার, স্বাস্থ্য পরিচর্যা, শিশু ও মাতৃমৃত্যু হার ও আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ সামাজিক-অর্থনৈতিক সূচকে ভারতের জিডিপি-কে ছাড়িয়ে গেছে বাংলাদেশ।
এখন বাংলাদেশের দৃশ্যপটে আবির্ভুত হয়েছে পদ্মাসেতু। প্রমত্তা পদ্মার বুকে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই স্বপ্নের সেতু এখন বাস্তব। রাজধানী ঢাকা ও দেশের বাকি অংশের সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোকে সংযোগকারী এই সেতু দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নকে বহুদূর এগিয়ে নেবে। বিশ্বের বুকে একটি গর্বের স্থান করে নিতে বাংলাদেশ কীভাবে সব বাধা পার হচ্ছে এটা তার প্রতীক।
সরকার আসে, সরকার যায়। দৃশ্যপটে যত উন্নয়ন দেখা যায় তার সব কৃতিত্ব সবাই নিতে চায়। কিন্তু বাংলাদেশের আসল শক্তি হলো এর জনগণ। যাই হোক না কেন তারা প্রাণবন্ত, সাহসী, প্রত্যয়ী ও আত্মবিশ্বাসী। তারা সবসময় সব দুর্যোগ পরি দিতে সক্ষম। তারা প্রমাণ করেছে যে ১৯৭১ সালের ১৮ ডিসেম্বর অর্জন করা বিজয় ছিল সূচনা মাত্র।
সর্বক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়েছে জনগণ। এরপরও আরো বহু দূর যেতে হবে। গণতন্ত্র অর্জন, দারিদ্র বিমোচন, সত্যিকারের উন্নয়ন, প্রগতি ও সমৃদ্ধি হাসিলের দৃঢ় প্রত্যয় জনগণকে বিজয়ের পথে অগিয়ে নিয়ে গেছে। এটা ছিল অবিচার ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে বিজয়। জনগণ অতীতে জয়ী হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও জয়ী হতে থাকবে। বাংলাদেশ তোমাকে অভিনন্দন।