নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশে ৯ হাজার মেগাওয়াট উদ্বৃত্ত থাকার পরও আরো ১ হাজার ৬শ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ক্রয় করা হচ্ছে ভারত থেকে। ঝাড়খণ্ডে নির্মাণাধীন ভারতীয় কোম্পানি আদানির কাছ থেকে এক হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ। এছাড়া নেপাল থেকে সরাসরি না নিয়ে ভারতীয় কোম্পানির মাধ্যমে নেপাল থেকেও বিদ্যুৎ কিনছে বাংলাদেশ। সে বিষয়ে একটি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ২১ হাজার মেগাওয়াটের বেশি। চাহিদা যদিও ১২ হাজার মেগাওয়াটের মতো। অর্থাৎ চাহিদার চেয়ে নয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষমতা এখন বাংলাদেশের রয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব আহমদ কাইকাউস সম্প্রতি বিবিসিকে বলেছেন, “বাংলাদেশ এখন বিদ্যুৎ ঘাটতির দেশ থেকে বিদ্যুৎ উদ্বৃত্তের দেশে রূপান্তরিত হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এখন আর বিদ্যুতের ঘাটতি নেই। “আমাদের বিদ্যুৎ বিভ্রাট হয়তো আছে, কিন্তু চাহিদা থাকলেও সরবরাহ করতে পারছি না, সেই অবস্থা আর নেই। লোডশেডিং করতে হচ্ছে না।”
ভারতীয় কোম্পানি আদানি গ্রুপের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ শেষের পথে রয়েছে। আগামী বছর অর্থাৎ ২০২২ সালে এ বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসার কথা রয়েছে। ভারতীয় অংশের গ্রিডলাইন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষের পথে রয়েছে। বিদ্যুৎকেন্দ্রটির সঙ্গে ক্রয় চুক্তিসহ অন্যান্য সকল প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শেষ করেছে পিডিবি। বাংলাদেশের বগুড়া দিয়ে এই বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে। তবে এ জন্য কোনও ব্যাক টু ব্যাক সাব-স্টেশন নির্মাণের প্রয়োজন হবে না। বিদ্যুৎকেন্দ্রের পুরো বিদ্যুৎ বাংলাদেশে রফতানি করাতে এর সঞ্চালন লাইনটি বাংলাদেশের জন্য মানানসই করে নির্মাণ করা হয়েছে।
কিন্তু কোনও কারণে ভারতে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে যদি বিদ্যুতের দামের হেরফের হয় তাহলে কী হবে? এই আলোচনা এতদিন না হলেও এখন বাংলাদেশ সেই আলোচনা করছে। বাংলাদেশ বলছে, এর দায় নেওয়া আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। অভ্যন্তরীণ কারণে দামের হেরফের হলে আমরা যে দামে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি করেছি সেই দাম বহাল রাখতে হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, বিদ্যুৎকেন্দ্রটি কয়লাচালিত। এখন সারা বিশ্বে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়ে সরকারগুলো নানা কঠোরতা আরোপ করছে। দেখা গেলো আগামীতে কোনও একসময়ে ভারত সরকার কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রের পরিবেশ দূষণের জন্য কর আরোপ করলো। আমরা বলছি এই করের দায় আমাদের পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়।
ভারতীয় বিদ্যুৎ সচিব সঞ্জীব নন্দন সাহাইয়ের নেতৃত্বে ভারতীয় প্রতিনিধি দল ঢাকায় জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠকে যোগ দিতে আসেন। গত ২৩ জানুয়ারি গভীর রাত পর্যন্ত ঢাকায় বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়।
বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা ভারতের রাজনৈতিক কারণে বিদ্যুতের দর বৃদ্ধির বিষয়ে দায় না নেওয়ার কথা জানিয়েছি। ভারতীয় প্রতিনিধি দল বলছে বিদ্যুতের ক্রয় চুক্তিতে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত থাকতে হবে। আমরা সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিচ্ছি।
প্রসঙ্গত, ২০১৭ সালের শেষদিকে আদানির সঙ্গে বিদ্যুতের ক্রয় চুক্তি করে পিডিবি। তবে তখন নানামুখী সমালোচনার জন্য আদানি এবং পিডিবি এই বিষয়ে খুব সরব ছিল না।
যুক্তি দেখানো হচ্ছে, দেশে উত্তরবঙ্গে এখনও বিদ্যুতের চরম সংকট রয়েছে। আদানির বিদ্যুৎ পাওয়া গেলে এই সংকট দূর করা সম্ভব। এজন্য পিজিসিবি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সঞ্চালন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। বগুড়া থেকে এই বিদ্যুৎ দিনাজপুর পর্যন্ত নিতেও আলাদা বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ করা হচ্ছে।
এখন ভারত থেকে এক হাজার ১৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানি করা হয়, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা এবং কুমিল্লা দিয়ে এই বিদ্যুৎ বাংলাদেশে আসে। আদানির বিদ্যুৎ যোগ হলে এক লাফে তা বেড়ে দাঁড়াবে ২ হাজার ৭৬০ মেগাওয়াটে।