নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জনের পর ডাক্তারদের একটি মহল চিকিৎসা চর্চা ও গবেষণা বাদ দিয়ে সরকারি চাকরি অথবা রাজনীতিতে চলে যান। আরেক শ্রেণি আছেন, তারা শুধু টাকা কামাতেই ব্যস্ত। এটা কাম্য নয়। অনেকে আবার একইসঙ্গে সরকারি চাকরি ও প্রাইভেট প্র্যাকটিসও করেন। চাকরি ও প্র্যাকটিসের পর তাদের গবেষণার কাজটা আর করা হয়ে ওঠে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই, গবেষণাকাজটা সবসময়ই চলুক। কিন্তু দুঃখের কথা না বলে পারিও না, সেটা হলো- আমাদের কৃষি নিয়ে গবেষণা চলছে, বিজ্ঞানের গবেষণাও চলছে। স্বাস্থ্যখাতে গবেষণা খুবই সীমিত। স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের গবেষণা খুবই সীমিত কয়েকজন করেন। স্বাস্থ্যবিষয়ক গবেষণা খুবই দরকার। বারবার বলার ফলে কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। তবে আরও বেশি দরকার। এজন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায় বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।’
বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) সকালে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, বিজ্ঞানী, গবেষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, ‘এনএসটি ফেলোশিপ’ ও ‘বিশেষ গবেষনা অনুদান’ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান এবং মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান।
সরকারের দক্ষ বিজ্ঞানী দরকার জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা গবেষণার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। দক্ষ বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদ সৃষ্টির লক্ষ্যে দেশে-বিদেশে বিজ্ঞান ও প্রযুক্ত গবেষণা এবং অধ্যয়নের জন্য এমএস, এমফিল, পিএইচডি প্রোগ্রামে বঙ্গবন্ধু ফেলোশিপ দেওয়া হচ্ছে। ২০১০ থেকে ২০২২-২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৬৮২ জনকে প্রায় ২৬৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার ফেলোশিপ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া এমফিল, পিএইচডি ও পিএইচডি-উত্তর পর্যায়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ দেওয়া হচ্ছে। এ ফেলোশিপের আওতায় ২০০৯-১০ থেকে এ পর্যন্ত ২৫ হাজার ৭০১ জন গবেষককে প্রায় ১৫৭ কোটি ৫১ লাখ টাকার বৃত্তি বা অনুদান দেওয়া হয়েছে। এটা শুধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় থেকে। পাশপাশি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট থেকেও ফেলোশিপ, বৃত্তি, উপবৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ফেলোশিপের পাশাপাশি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণা উন্নয়নকাজে উৎসাহ দিতে বিজ্ঞানী ও গবেষকদের মাঝে বিশেষ অনুদান দেওয়া হচ্ছে। ২০০৯-১০ থেকে চলতি অর্থবছর পর্যন্ত পাঁচ হাজার ৫২১টি প্রকল্পের আওতায় ১৭৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা গবেষণা অনুদান দেরয়া হয়েছে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি আশা করি, যারা এ গবেষণা বা ফেলোশিপের জন্য অনুদান পেয়েছেন, আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে গবেষণা করবেন। আমি জানতে চাই, আপনারা কী কী উদ্ভাবন করলেন বা তা দেশের উন্নয়নে কতটুকু কাজে লাগবে। যদিও গবেষণার কোনো শেষ নেই।’
পরিবর্তিত বিশ্বে প্রযুক্তির সঙ্গে খাপ খাওয়ানোর বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রযুক্তিতে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন ঘটছে। নতুন থিওরি চতুর্থ শিল্পবিপ্লব এসে গেছে। ফলে আমাদের লোকবল হয়তো কম লাগবে। কিন্তু প্রযুক্তিকে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে হবে। সেজন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি দরকার। আবার আমরা সম্পূর্ণ সেদিকে যেতে চাই না। শ্রমঘন শিল্প করতে চাই। কারণ আমাদের বিশাল জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করতে হবে। এ দুটি মিলিয়ে আমাদের দেশকে কীভাবে এগিয়ে নিতে পারি, সেই চিন্তাই সবার মাথার মধ্যে থাকতে হবে।’
বিজ্ঞান ও গবেষণা জাতির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গবেষণাই সাফল্য এনে দিতে পারে, এটা এখন প্রমাণিত। গবেষণার কারণে আমরা আমিষ ও খাদ্য উৎপাদনে সফল হয়েছি। ১৯৯৬ সালে সরকারে এসেই দেশে প্রথমবারের মতো আমরা গবেষণার জন্য ১২ কোটি টাকা থোক বরাদ্দ দিয়েছিলাম। পরবর্তীসমযে বাজেটে তা ১০০ কোটি টাকায় উন্নীত করেছিলাম। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে দেশে ১২টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। শুধু তাই নয়, বিদেশ থেকে জ্ঞান আহরণ করে যেন দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারে, সে ব্যবস্থাও আমরা করেছি। এছাড়া সমুদ্রবিজ্ঞান ইনিস্টিটিউট, বায়ো-টেকনোলজি ইনস্টিটিউট এবং নভোথিয়েটার করেছে সরকার।’
দেশে শুধু একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার আরও কয়েকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। অনেক বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে দেশের প্রথম মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ও প্রতিষ্ঠা করেছে আওয়ামী লীগই। এখন বিভাগীয় শহরগুলোতেও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পদক্ষেপ নিয়েছে।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে জলবায়ু ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে জলবায়ু দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও প্রশমনে পদক্ষেপ নিয়েছে, যা অনেক উন্নত দেশও করেনি। পাশাপাশি সমুদ্রসম্পদ কাজে লাগাতে ব্লু ইকোনমিকেও সরকার গুরুত্ব দিয়েছে।’
সরকারপ্রধান আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, যত বেশি গবেষণা বাড়বে, তত বেশি জাতি হিসেবে অর্থনৈতিক উন্নয়নে আমাদের দেশের মানুষ অবদান রাখতে পারবে। সরকার স্থানীয়ভাবে উদ্ভাবিত প্রযুক্তির প্রয়োগ ও সম্প্রসারণকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের ঘোষণা অনুযায়ী- সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে এবং রূপকল্প-২০০১ বাস্তায়নের মাধ্যমে আজ বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে পরিনত হয়েছে। এখানে থেমে থাকলে হবে না। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রা এগিয়ে নিয়ে যাবে নতুন প্রজন্ম। আমরা কোনোভাবেই পিছিয়ে পড়বো না। কারও কাছে হাত পেতে চলবো না। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তালমিলিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা যাতে অব্যাহত থাকে, সেজন্য কাজ করবে আমাদের নতুন প্রজন্ম। এজন্য সবার আত্মবিশ্বাস থাকতে হবে। সর্বক্ষেত্রে প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা স্মার্ট দেশ গড়ে তুলবো। ২০৪১ সালের বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ।’