নিউজ ডেস্ক: দীর্ঘদিন ধরে জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনে পান, শুঁটকি ও সামুদ্রিক মাছ মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জে বাজারজাত করে আসছিলেন। জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন তারা।
শুধু তিন বন্ধুই নন, বিপাকে পড়েছেন এমন শত শত ব্যবসায়ী। কেউ খরচ মেটাতে না পারায় ব্যবসাও ছেড়ে দিয়েছেন। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত যাত্রীরাও যাতায়াতে পড়েছেন চরম ভোগান্তিতে।
রেলওয়ের ৫৬টি ট্রেন বন্ধ থাকায় বছরে অন্তত ৩৬ কোটি টাকার আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। বর্তমানে সিলেট রুটে একটি ট্রেনই চলাচল করে। চট্টগ্রাম থেকে উদয়ন এক্সপ্রেস নামের যে ট্রেন যায়, সেটি সিলেট থেকে পাহাড়িকা হয়ে আসে। এই ট্রেনে স্ট্যান্ডিং টিকিট না পেয়ে অনেক যাত্রী বিনা টিকিটে উঠে পড়েন। এরকম একটি রুটে যেখানে ট্রেন বাড়ানো দরকার, সেখানে ২০২০ সালের ১০ অক্টোবর ওই রুটে চলাচল করা ‘গরীবের ট্রেন’ হিসেবে খ্যাত জালালাবাদ এক্সপ্রেস বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে। ট্রেনটি সিলেট থেকে চট্টগ্রাম যাত্রাপথে মৌলভীবাজার জেলা, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা ও ফেনী রুটে চলাচল করতো।
রেলওয়ের বাণিজ্যিক বিভাগ জানায়, জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন ১০ বগি নিয়ে চলাচল করতো। স্বল্প দূরত্বে যাত্রীদের এই ট্রেনই ভরসা ছিলো। প্রতিদিন গড়ে আয় হতো দেড় লাখ টাকার মতো। কিন্তু ট্রেনটি বন্ধ হওয়ায় এই এক ট্রেন থেকে মাসে সাড়ে ৪ কোটি টাকা হাতছাড়া হচ্ছে রেলের। ইঞ্জিন ও কোচ সংকটের অজুহাতে ট্রেনটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। এই ট্রেনের ইঞ্জিন এখন পরিবহন করছে কনটেইনার।
একইভাবে করোনার সময় রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আরও ৫৫টি ট্রেন বন্ধ করে দেয় রেলওয়ে। প্রথমে সাময়িক বন্ধের কথা বললেও তিন বছরেও সেসব ট্রেন চালু করা যায়নি। বন্ধ থাকা এই ৫৬টি ট্রেনের মধ্যে ২৪টি ডেমু ট্রেন, বাকিগুলো মেইল ও লোকাল ট্রেন। যেগুলো স্বল্প দূরত্বে চলাচল করতো। নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা কম টাকায় তাদের গন্তব্যে যাওয়া আসা করতো। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ঢাকা-নোয়াখালী রুটের নোয়াখালী কমিউটার, আখাউড়া-সিলেট রুটের কুশিয়ারা এক্সপ্রেস, ঢাকা-ময়মনসিং রুটের ঈশাখাঁন এক্সপ্রেস, ঢাকা-গাজীপুর হাইটেক সিটি রুটের কালিয়াকৈর কমিউটার-১ ও ২, ময়মনসিংহ-দেওয়ানগঞ্জ রুটের লোকাল ট্রেন, ময়মনসিংহ-ভৈরববাজার রুটের লোকাল ট্রেন, সিলেট-ছাতকবাজার-সিলেট রুটের লোকাল ট্রেন।
রেলওয়ের পরিবহন ও বাণিজ্যিক বিভাগ জানায়, এই ৫৬টি ট্রেন ৮-১০টি বগি নিয়ে চলাচল করতো। প্রতিদিন এক লাখ মানুষ যাতায়াতের জন্য এসব ট্রেনের ওপর নির্ভরশীল ছিল। মাসে এক কোটি টাকার ওপরে আয় হতো এই ট্রেন থেকে। ৩ বছরের অধিক সময় ধরে বন্ধ থাকায় রেলওয়েও ৩৬ কোটি টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে।
শুধু জালালাবাদ এক্সপ্রেস নয়, ৫৬টি ট্রেন বন্ধ থাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ, গাজীপুর, লাকসামসহ বিভিন্ন রুটের লোকাল যাত্রীরা টিকিট ছাড়াই আন্তনগর ট্রেনে ভ্রমণ করছেন। এতে চাপ বাড়ছে আন্তনগর ট্রেনগুলোর ওপর। টিকিট নিয়ে ভ্রমণ করা যাত্রীরাও পড়ছেন ভোগান্তিতে। অন্যদিকে বিনা টিকিটে যাত্রী তুলে অবৈধ টাকা আয় করছেন টিটিইসহ ট্রেনের কর্মচারীরা।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা নাজমুল ইসলাম বলেন, কোচ ও ইঞ্জিন সংকটের কারণে মূলত ৫৬টি ট্রেন চালু করা যাচ্ছে না। এসব ট্রেনে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্ত ছাড়াও ব্যবসায়ীরা ভ্রমণ করতেন। ট্রেন চালক, গার্ড ও লোকবল সংকটের কারণেই ট্রেনগুলো বন্ধ রয়েছে। তবে জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন চালানোর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ বলছে, ট্রেনচালক, গার্ড ও লোকবলের সংকট কাটিয়ে এসব ট্রেন চালু করা হবে। শিগগিরই জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেন চালানোর বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এছাড়া বন্ধ থাকা ৫৬টির মধ্যে ২৪টি ডেমু ট্রেন চালানো সম্ভব নয়। বাকিগুলোর মধ্যে ১০ জোড়া ট্রেন চালানোর বিষয়ে ভাবা হচ্ছে।