নিউজ ডেস্ক: দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করলেও বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগের অভিযোগ পাওয়া যায় নিয়মিতই।
বিশেষ করে সাম্প্রতিক সময়ে স্বাস্থ্য খাতকে ঢালাওভাবে সাজাতে সরকারের নেওয়া নানা উদ্যোগের ফলে এ খাতে জনবল বাড়াতে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষা।
কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, বেশিরভাগ পরীক্ষাতেই অর্থের বিনিময়ে অযোগ্য লোকেরা নিয়ম বহির্ভূতভাবে নিয়োগ পাচ্ছেন।
এমনই এক অভিযোগ উঠেছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিদর্শিকা (প্রশিক্ষণার্থী) নিয়োগ পরীক্ষায়।
অভিযোগ করা হয়, প্রায় ৫ কোটি টাকা অবৈধ লেনদেনের মাধ্যমে দেশব্যাপী ৯৭২ জনকে নির্বাচিত করেছেন অধিদপ্তরের কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। তাদের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি উঠেছে।
শনিবার (২০ মে) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি তোলেন আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নেতারা।
এসময় ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা ড. সুফি সাগর সামস এক লিখিত বক্তব্যে বলেন, আইন ও মানবাধিকার সুরক্ষা ফাউন্ডেশন ও একটি জাতীয় দৈনিকের দপ্তরে আসা বিভিন্ন অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে আমরা দেখেছি, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিদর্শিকা (প্রশিক্ষণার্থী) নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় বিপুল পরিমাণ অর্থের বিনিময়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক (প্রশাসন) খান মো. রেজাউল করিমের নির্দেশনায় ৯৭২ জন চাকরি প্রত্যাশীকে অনৈতিকভাবে অতিরিক্ত নম্বর দেওয়া হয়েছে।
খান মো. রেজাউল করিমের নেতৃত্বে অধিদপ্তরে একটি সিন্ডিকেট এসব কাজ নিয়ন্ত্রণ করে অভিযোগ করে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে তারা লিখিত পরীক্ষার প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি পরিবর্তন করে অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে নিয়োগ বাণিজ্যকে ত্বরান্বিত করার জন্য মেধা যাচাইয়ের পরীক্ষায় ‘টিক চিহ্ন’ পদ্ধতি চালু করে। চাকরি প্রত্যাশী প্রতি পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে ৩ থেকে ৪ লাখ টাকা ঘুষ হিসেবে গ্রহণ করে।
তিনি অভিযোগ করেন, ৯৭২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি চাকরি প্রত্যাশীর পরীক্ষার খাতায় টাকার বিনিময়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের মাধ্যমে টিক মার্ক দেওয়া হয়েছে। যা বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হলে নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হবে বলেও দাবি করেন তিনি।
এসময় জানানো হয়, এসব অভিযোগের বিষয়ে গত ৫ মার্চ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব বরাবর একটি অভিযোগপত্র দেওয়া হয়েছে।
লিখিত ওই অভিযোগে বলা হয়েছে, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা (প্রশিক্ষণার্থী) নিয়োগ পরীক্ষায় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) খান মোহাম্মদ রেজাউল করিমের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট ৪৬টি জেলার চাকরি প্রত্যাশীদের কাছ থেকে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করিয়ে দেওয়ার আশ্বাসে বড় রকমের আর্থিক লেনদেন করেছেন। অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন), প্রশাসন ইউনিটের নেতৃত্বে এই সিন্ডিকেট সারাদেশ থেকে চাকরি প্রত্যাশী বিভিন্ন প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ করিয়ে দেওয়ার কথা বলে এক থেকে দুই লাখ টাকা সংগ্রহ করেছে। এমন অনেক প্রার্থী রয়েছে, যাদের চূড়ান্ত নিয়োগের আশ্বাস দিয়ে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকাও লেনদেন হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়।
এসময় ভূক্তভোগী চাকরি প্রত্যাশী লুৎফুন নাহার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত কোনো চাকরিতে প্রবেশ করতে পারিনি। এই চাকরির জন্য পরীক্ষা আমার খুব ভালো হয়েছে। আর মাত্র কয়েকটা মাস আমার চাকরির বয়স আছে। কিন্তু এখানেও নিয়োগ বাণিজ্যের কারণে আমি প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হতে পারিনি। আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানাই, যোগ্য প্রার্থীদের নিয়োগ দেওয়া হোক। অর্থের বিনিময়ে নয়।
জানা যায়, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ জমা পড়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেকের কাছেও। ওই অভিযোগে, বিভাগীয় নির্বাচন কমিটির সভাপতি খান মো. রেজাউল করিম ছাড়াও আরও অভিযুক্ত করা হয় অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও নির্বাচন কমিটির সচিব মো. সানাউল্লাহ নূরীকেও।