নিজস্ব প্রতিবেদক: নদীভাঙনে দেশে প্রতি বছর বিলীন হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ হেক্টরের বেশি জমি। এর সঙ্গে প্রতি বছর বাস্তচ্যুত হচ্ছে ২৫ হাজার মানুষ। তারা জমি, ভিটেমাটি হারিয়ে অসহায় জীবনযাপন করছে বিভিন্ন শহরে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অকালবৃষ্টি ও বন্যা, নদীর দিক পরিবর্তন এবং সুরক্ষা বাঁধ না থাকায় ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। বাস্তুহারা মানুষ কোথায় ঠাঁই পাবে, তাদের ভবিষ্যৎ কী দাঁড়াবে— তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নেই। নদীতে বিলীন হওয়া স্থানে আবার চর জাগলেও শক্তিশালী ব্যক্তিবর্গের দখল ও আইনি জটিলতায় সে জমি ফিরে পান না প্রকৃত মালিকরা। সিকস্তি—পয়স্তি আইন অনুযায়ী, ৩০ বছরের মধ্যে নদীতে ভেঙে যাওয়া জমি জেগে উঠলে সে জমি প্রকৃত মালিক ফেরত পাবে। কিন্তু জমি ফিরে পেতে গেলে মামলা—হামলা, দখল—পালটা দখল এবং রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। গত কয়েক দশকের ব্যবধানে দেশে নদীভাঙন কিছুটা কমে আসছে। ১৯৯০ সালের দিকে দেশে নদীভাঙনে বিলীন হয় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর, যা এখন ২—৩ হাজার হেক্টরে নেমে এসেছে। গত চার—পাঁচ বছর ধরেই এই ভাঙন কমছে। মূলত যমুনা নদীর পাড় ঘিরে বাঁধ তৈরির কারণে এই সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। ২০২১ সালে দেশের প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমি নদীতে বিলীন হয়।
পরিবেশ, বন ও পানিবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের ‘ন্যাশনাল অ্যাডাপ্টেশন প্ল্যান অব বাংলাদেশ (২০২৩—২০৫০)’ প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দেশে ১৯৭৩ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রধান দুই নদী পদ্মা—যমুনার ভাঙনে বিলীন হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমি। এর মধ্যে যমুনায় বিলীন হয়েছে ৯৩ হাজার ৯৬৫ হেক্টর, আর পদ্মায় ৬৩ হাজার ৫৫৮ হেক্টর। গড়ে প্রতি বছর ৩ হাজার ২০০ হেক্টরের বেশি জমি বিলীন হচ্ছে। নদীভাঙনে বিলীন হচ্ছে কৃষিজমি, বসতবাড়ি, রাস্তা, বাঁধ ও অবকাঠামো।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) দুর্যোগবিষয়ক পরিসংখ্যান (বিডিআরএস) বলছে, ‘২০২১ : ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ন্যাচারাল ডিজাস্টার পারসপেকটিভ’ শীর্ষক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে নদী ও উপকূলের ভাঙনে ক্ষতির শিকার হওয়া পরিবারের সংখ্যা বাড়ছে। এ ছাড়া নদী ও উপকূলের ভাঙনে ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ৬ বছরে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা।