নিউজ ডেস্ক: ঢাকা জেলার নবাবগঞ্জ উপজেলা সদর থেকে মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে নতুন বান্দুরা শাহী মসজিদ তথা ভাঙ্গা মসজিদ অবস্থিত। প্রায় ৫০ শতাংশ জমির উপর তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটির অবস্থান। এর মধ্যে মাত্র দুই শতাংশ জমির উপর রয়েছে মূল ভবনটি। প্রতিদিনই দূর থেকে মসজিদটিতে লোকজন আসে ইবাদত করতে। প্রতি শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করতে নবাবগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী দোহার, মানিকগঞ্জ, কেরানীগঞ্জসহ আশেপাশের কয়েকটি থানার কয়েক হাজার নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে। পুরুষের পাশাপাশি নারীদের নামাজের জন্য রয়েছে আলাদা সুব্যবস্থা।
স্থানীয়দের কাছ থেকে যানা যায় যে, মসজিদটি গায়েবী। মূল ভবনটি মাটির নিচ থেকে উঠেছে। মসজিদে নামাজ পড়ে কোনো কিছু মানত করলে আল্লাহর রহমতে সেই আশা পূরণ হয় বলে জানান আগতরা। সেই বিশ্বাসেই দিন দিন মসজিদে আগতদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটি সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে নির্মিত। সেই হিসেবে প্রায় ৪শ বছরের পুরোনো মসজিদটি নবাবগঞ্জের কালের স্বাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে প্রায় ১৬৫ ফুট সুউচ্চ একটি মিনার। মিনারটি ঢাকা দক্ষিণের সবচেয়ে বড় মিনার বলে জানা যায়।
কালের বিবর্তনে ইছামতি নদী ভাঙতে ভাঙতে উত্তর দিকে চলে যায়। তখন মসজিদের পাশে কোনো বসতি ছিল না। পুরো এলাকাই ছিলো বনাঞ্চল। ১৮৮০ সালে হিন্দু জমিদাররা এসব বনাঞ্চল দখলে নেয়। তখন সেখানে হিন্দুরা বসতি স্থাপন করার জন্য বনাঞ্চল কাটা আরম্ভ করে। বন কাটার সময় হঠাৎ দেখতে পায় একটি মসজিদ। যার উপরের কিছু অংশ ভাঙা। তখন থেকে এ মসজিদের নাম হয় ভাঙ্গা মসজিদ বা গায়েবী মসজিদ। সে সময় সেখানে মসজিদ নির্মাণের বিভিন্ন সরঞ্জমাদি পাওয়া যায়।
তবে সময়ের সাথে সাথে সেগুলো হারিয়ে গেছে। এরপর মসজিদের দেখাশোনার দায়িত্ব নেন স্থানীয় আলফু ফকির, দুদু মীর, আবেদালী মীর, গোপাল মাদবর, মৈজদ্দিন সিকদার, গহের আলী খন্দকারসহ স্থানীয়রা। সে সময় আবু মোল্লাকে মসজিদের মোতাওয়াল্লি বা সেবক নিযুক্ত করা হয়। সিএস রেকর্ডে মসজিদের পক্ষে তার নামই রয়েছে। ১৯৪৫ সালে স্থানীয় আবেদ আলী নিজ অর্থায়নে কিছু অংশ সংস্কার করেন। তখন মসজিদের সেবক হিসেবে দুখাই বেপারীকে নিয়োগ দেওয়া হয়।
১৯৬০ সালে নতুন বান্দুরা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ হিসেবে আসেন আবজাল হোসেন নামে এক ধর্মপ্রাণ পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি গ্রামবাসীকে নিয়ে ভাঙ্গা মসজিদটির কিছু মেরামত এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করেন। কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন ডা. আলমাছ উদ্দিন। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মকবুল বেপারী ও কদম আলীকে কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। ওই কমিটি প্রায় ২০ বছর দায়িত্ব পালনের পর ১৯৮০ সালে স্থানীয় আমজাদ হোসেন মাদবর গ্রামবাসীকে নিয়ে মসজিদের নতুন কমিটি ঘোষণা দিয়ে দায়িত্ব বুঝে নেন।
দায়িত্ব নেওয়ার পরই এলাকাবাসীর সহযোগিতায় মসজিদের আয়তন বৃদ্ধি করা হয়। তখন মূল ভবনের সংস্কার করলেও তার অবকাঠামোর কোনো পরিবর্তন করা হয়নি। দীর্ঘসময় মসজিদের সেবক হিসেবে নিষ্ঠার সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন প্রয়াত সামসুদ্দিন মুন্সি। পরবর্তীতে আমজাদ হোসেন মাদবরের ছোট ছেলে কুয়েত প্রবাসী নজরুল ইসলামের প্রচেষ্টায় বিদেশের অর্থায়নে মসজিদ সংলগ্ন আরেকটি ভবন তৈরি করা হয়।
২০০১ সালে মীর সফিউদ্দিন ও জনাবালী সিকদারকে উপদেষ্টা হিসেবে রেখে খন্দকার ফরহাদ হোসেনকে সভাপতি, মতিয়ার রহমানকে সাধারণ সম্পাদক ও ফজলুর রহমানকে কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণের পর স্থানীয় মো. হানিফ, ইমাম সামসুদ্দিন মুন্সি, পান্নু দেওয়ান, নান্নু দেওয়ান, আ. হালিম খান, মালেক দেওয়ান, আ. মান্নান মেম্বার ও মো. হারুন অর রশিদ এলাকাবাসী নিয়ে মসজিদ প্রাঙ্গনে একটি মিনার নির্মাণের পদক্ষেপ নেন। কিছুদিন কাজ করার পর মিস্ত্রি ও অন্য অসুবিধার কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যায়।
দীর্ঘ বিরতির পর ২০১১ সালের ৪ মার্চ পুনরায় মিনারের কাজ আরম্ভ হয়। ১৬৫ ফুট উঁচু মিনারটির কাজ এখন সমাপ্তির পথে। এ পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে বলে জানায় মসজিদ কমিটি। তবে সংস্কার ও প্রায় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মিনারের জন্য সরকারি কোনো সাহায্য নেওয়া হয়নি। মসজিদে আগতদের অনুদানেই মিনারটি নির্মিত হচ্ছে। এমনকি এলাকাবাসীর কাছ থেকেও কোনো চাঁদা নেওয়া হয়নি বলে জানায় সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে প্রায় ৩০ বছর ধরে দায়িত্ব পালনকারী কোষাধ্যক্ষ বলেন, ‘মসজিদে আগত মুসল্লিদের দানে মাসে প্রায় লক্ষাধিক টাকা আসে। সেই টাকা দিয়েই কোটি টাকা ব্যয়ে মিনারটি নির্মাণ করা হচ্ছে। মসজিদের আয়-ব্যয়ের হিসাব প্রতি শুক্রবার নামাজ শেষে উপস্থিত সবাইকে অবহিত করা হয়।’
মসজিদের বর্তমান ইমাম মুফতি মতিয়ার রহমান বলেন, ‘মানুষ আল্লাহর উপর বিশ্বাস করেই ভাঙ্গা মসজিদে আসেন ইবাদত করতে। বিশেষ করে প্রতি শুক্রবার কয়েক হাজার মানুষের আগমন ঘটে এ মসজিদে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করি তাদের সহযোগিতা করতে।’
খালিক্ব মালিক রব আল্লাহ পাক সুবহানাহূ ওয়া তায়ালা তিনি এবং কুল-কায়িনাতের নবী ও রসূল, সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন, নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাদের ঘোষণাকৃত চারটি হারাম বা সম্মানিত মাস উনাদের মধ্যে একটি হলো পবিত্র রজবুল হারাম মাস।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে- নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ করেন, “পবিত্র রজবুল হারাম শরীফ হলো মহান আল্লাহ পাক উনার মাস, পবিত্র শা’বান শরীফ হলো আমার মাস এবং পবিত্র রমাদ্বান শরীফ হলো আমার উম্মতের মাস।” সুবহানাল্লাহ!
তত্ত্ববিদগণের মতে, তিন অক্ষর বিশিষ্ট ‘রজব’ শব্দটির ‘র’ অক্ষর দ্বারা রহমতের, ‘জীম’ অক্ষর দ্বারা জুরমুন অর্থাৎ গুনাহর এবং ‘বা’ অক্ষর দ্বারা র্বারুন অর্থাৎ অনুগ্রহের সঙ্কেত বহন করে। যেমন মহান আল্লাহ পাক তিনি পবিত্র হাদীছে কুদসী শরীফে ইরশাদ মুবারক করেন, “আমি আমার বান্দার গুনাহকে আমার রহমত ও অনুগ্রহের মাঝখানে রাখি।” সুবহানাল্লাহ! (মুকাশাফাতুল কুলূব)
অর্থাৎ মহান আল্লাহ পাক তিনি রহমতে খাছ দ্বারা বান্দার গুনাহ ক্ষমা করে বান্দাকে নেককার করেছেন।
অতএব, প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উচিত এ মাসে অতীত জীবনের গুনাহখতার জন্য খালিছভাবে তওবা-ইস্তিগফার করে যথাসাধ্য ইবাদত-বন্দেগীতে মনোনিবেশ করা এবং এজন্য মহান আল্লাহ পাক উনার নিকট মদদ ও তাওফীক কামনা করা।
মুফতী শুয়াইব আহমদ
বিশিষ্ট ইসলামিক লেখক ও গবেষক
নিজস্ব প্রতিবেদক: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার সঙ্গে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জড়িত থাকার প্রমাণ রয়েছে, যথাসময়ে তা জাতির সামনে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
রোববার (১৪ ফেব্রুয়ারি) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে নিজ দফতরে সংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মন্ত্রী এ কথা জানান।
গত ৯ ফেব্রুয়ারি জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭২তম সভায় জিয়াউর রহমানের বীর উত্তম খেতাব বাতিলের সুপারিশ করা হয়। একইসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর চার দণ্ডপ্রাপ্ত খুনির মুক্তিযোদ্ধার খেতাব বাতিলেরও সুপারিশ করে জামুকা।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা বলেছি জিয়াউর রহমান সাহেব বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত। খুনি হিসেবে আমরা সেটা (খেতাব বাতিলের সুপারিশ) বলেছি। তার দলের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তিনি খুনের সঙ্গে জড়িত নন। আমরা বলেছি, তার কী সম্পৃক্ততা আছে সেটার দালিলিক প্রমাণ ও তথ্যাদিসহ আমরা জাতির কাছে উপস্থাপন করব।’
জিয়াউর রহমানের খেতাব বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়েছে নাকি প্রস্তাব করা হয়েছে- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘প্রস্তাব, এটা তো আপনারা দেখেছেনই। আমরা তো প্রস্তাবের মালিক, আমরা প্রস্তাব করেছি।’
মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ‘বিএনপির মূল কথা হলো, তিনি (জিয়াউর রহমান) হত্যার সঙ্গে জড়িত নন। আমরা বলেছি, তিনি যে বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে জড়িত আমাদের কাছে তার প্রমাণ আছে। আমরা ইনশাআল্লাহ যথাসময়ে প্রমাণসহ জাতির সামনে পেশ করব। ওয়েট অ্যান্ড সি।’
মূর্তি হোক বা ভাস্কর্য, খোদাই হোক বা কাঠে কাটা হোক, লোহার হোক বা প্লাস্টিকের, মাটির হোক বা পাথরের মাধ্যমে, ক্যামেরার ছবি হোক বা হাতে আঁকা হোক, পূজার উদ্দেশ্যে হোক বা সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য হোক বা যেটাই হোক যদি কোন প্রানীর প্রতিকৃতি হয় সেটাই ইসলামের ফতোয়া অনুযায়ী হারাম। সকল হাদীছ শরীফের কিতাবে এটাই উল্লেখ আছে এ বিষয়ে পৃথিবীর সকল ইমাম মুস্তাহিদগন একমত।
বর্তমান আন্দোলনকারী মৌলবীরা এ কথাটা কেন দৃঢ়তার সাথে বলছে না। খালি মূর্তি ভাস্কর্য শব্দ ব্যবহার করতেছে। হাদীছ শরীফের এটা স্পষ্ট করে বলা হয়েছে,
كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ
অর্থ: প্রত্যেক প্রানীর প্রতিকৃতি তৈরীকারীই জাহান্নামী। (মুসলিম শরীফ হাদীছ ৫৬৬২, মুসনাদে আহমদ ২৮১১)
এ বিষয়ে ইমাম মুস্তাহিদগন বলেন,
قال النووى قال العلماء: تصوير صورة الحيوان حرام شديد التحريم وهو من الكبائر لانه متوعد عليه بهذا الوعيد الشديد، وسواء صنعه لما يمتهن ام لغيره فصنعه حرام بكل حال وسواء كان فى ثوب او بساط او درهم او دينار او فلس او اناء او حائط او غيرها، فاما تصوير ما ليس فيه صورة حيوان فليس بحرام. قلت: ويؤيد التعميم فيما له ظل و فيما لا ظل له.
অর্থ: হযরত ইমাম নববী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন, হযরত উলামায়ে কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম উনারা বলেছেন: প্রাণীর ছবি আঁকা বা তৈরি করা হারাম, এমনকি কঠিন হারাম। এটা কবীরা গুনাহ। কেননা প্রাণীর ছবি অঙ্কনকারীদের ব্যাপারে হাদীছ শরীফ-এ কঠিন আযাব-গযবের প্রতিশ্রুতি রয়েছে। তিরস্কার করার জন্য তৈরি করুক অথবা তিরষ্কার না করার জন্য তৈরি করুক, তা তৈরি করা সর্বাবস্থায় হারাম। অনুরূপ কাপড়ে, বিছানায়, রৌপ্য মুদ্রায়, স্বর্ণ মুদ্রায়, টাকা-পয়সায়, পাত্রে, দেয়ালে অথবা এছাড়া অন্যান্য কিছুতে প্রাণীর ছবি আঁকা হারাম। কিন্তু প্রাণহীন বস্তুর ছবি আঁকা হারাম নয়। আমি বলি (হযরত ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি তিনি বলেন) , প্রাণীর ছূরত যে হারাম এ ফতওয়া আমভাবে মূর্তি-ভাস্কর্য ও ছবির ব্যাপারে সমানভাবে প্রযোজ্য।
(ফতহুল বারী- অধ্যায়: পোশাক পরিচ্ছদ: ক্বিয়ামতের দিন প্রাণীর ছবি অঙ্কনকারীদের শাস্তি প্রদান সম্পর্কে ১০ম খ- ৩৮৪ পৃষ্ঠা)
সূতরাং মাধ্যম যেটাই হোক বা উদ্দেশ্য যেটাই হোক প্রানীর প্রতিকৃতি তেরী করাই হারাম। যারা হালাল বলবে তারা ঈমানহারা হবে।
মুফতি মুহম্মদ নূরউদ্দীন
লেখক ও গবেষক।
নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমান চলমান পরিস্থিতিতে প্রাণীর আকৃতি তৈরি করা (মূর্তি, ভাস্কর্য, ছবি) হারাম হওয়ার বিষয়ে ফতওয়া প্রকাশ করা হয় ঢাকা রাজারবাগ দরবার শরীফ থেকে । ফতোয়ার শুরুতেই বলা হয় আজ থেকে ২৮ বছর আগেই রাজারবাগ শরীফ থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা “আল বাইয়্যিনাত শরীফে” ৩৫৩ টি দলীল দিয়ে প্রমাণ করা হয়েছিলো প্রানীর ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য, প্রতিকৃতি হারাম ও নাজায়িয। পরবর্তীতে এর ধারাবাহিকতায় ৭০ টি সংখ্যাব্যাপী ১১৬০ টি দলীল দিয়ে বিস্তারিত ফতোয়া প্রকাশ করা হয়। কিন্তু সে সময় বর্তমানে যারা ছবি মূর্তি, ভাস্কর্য ইস্যুতে প্রতিবাদ করেছে তারা সে ফতোয়ার প্রতি গুরুত্ব না দিয়ে নিজেরাই ছবি, ভাস্কর্যের বিষয়ে নমনীয় ছিলো। তারা যতি তখন ফতোয়া মেনে নিতো তাহলে বর্তমানে এমন ইস্যু তৈরীই হতো না বলে রাজারবাগ থেকে প্রকাশিত ফতোয়ায় উল্লেখ করা হয়।
পাঠকদের জন্য সম্পূর্ণ ফতোয়াটি উল্লেখ করা হলো-
বর্তমান সময়ে ছবি মূর্তি, ভাস্কর্য নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে পাল্টা-পাল্টি বক্তব্য শুনা যাচ্ছে। কেউ ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য হালাল বানানোর জন্যে মনগড়া দলীল দেয়ার চেষ্টা করছে। আবার একপক্ষ সেটা খন্ড করার জন্য দলীল উপস্থাপন করছে। যারা খন্ডন করার জন্য দলীল উপস্থাপন করছে তাদের পূর্বসূরি এবং তারা নিজেরাও হারাম ছবি, ভিডিও এর মধ্যে মশগুল আছে। যে কারণে তাদের কথার কোন ক্রিয়া হচ্ছে না সমাজে। আজ থেকে প্রায় ২৮ বছর আগে ১৯৯২ সালের এপ্রিল মাসে ঢাকা রাজারবাগ শরীফ থেকে প্রকাশিত মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফের ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম তিনটি সংখ্যায় ৩৫৩টি দলীল দ্বারা প্রাণীর ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য ইসলামী শরীয়ত উনার দৃষ্টিতে হারাম বলে ফতওয়া প্রকাশ করা হয়েছিলো, তখন কিন্তু (যারা বর্তমানে ছবি মূর্তি, ভাস্কর্যের বিপক্ষে) তারা রাজারবাগ শরীফ থেকে প্রকাশিত উক্ত ফতওয়া না মেনে দুনিয়াবী স্বার্থ হাছিলের জন্য রাজারবাগ শরীফ উনার বিরোধিতা করেছিলো। যদি তারা তখন রাজারবাগ শরীফ থেকে প্রকাশিত ফতওয়া মেনে নিতো এবং নিজেরাও ছবি তোলা ও ভিডিও করা থেকে বিরত থাকতো তাহলে আজকে এ ফিতনার সূত্রপাতই হতো না। যামানার যিনি মুজাদ্দিদ হন উনার তাজদীদ না মেনে কখনো দ্বীন ইসলাম উপর থাকা যায় না, এটার স্পষ্ট প্রমাণ ঢাকা রাজারবাগ শরীফ থেকে প্রকাশিত ফতওয়া না মেনে কালক্ষেপন করা।
তাছাড়া রাজারবাগ শরীফ থেকে পুনরায় মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফে ছবি তোলা, আঁকা, রাখা, ভাস্কর্য, মূর্তি তৈরীর বিষয়ে ১৬৮ থেকে ২৩৭ পর্যন্ত মোট ৭০টি সংখ্যায় প্রায় ৭০০ পৃষ্ঠাব্যাপী পবিত্র কুরআন শরীফ উনার আয়াত শরীফ উনার অসংখ্য তাফসীর এবং প্রায় ৩০ খানার অধিক হাদীছ শরীফ উনার কিতাব এবং সংশ্লিষ্ট অসংখ্য শরাহ বা ব্যাখ্যাগ্রন্থ এবং অনুসরণীয় ইমাম মুজতাাহিদ ও উলামায়ে কিরাম উনাদের ফতওয়া থেকে ১১৬০টি দলীল পেশ করা হয়েছে যাতে কারো পক্ষে এ বিষয়ে কোনরূপ সংশয় সন্দেহ না থাকে। অথচ উক্ত দলীলসমূহ সম্পূর্ণরূপে পাশ কাটিয়ে দুনিয়াবী স্বার্থ ও খ্যাতি হাছিলের মোহে পড়ে নিজেরাও আজ লাঞ্ছিত এবং মানুষকেও করেছে বিভ্রান্ত। সর্বোপরি আজ তারা ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় মুজাদ্দিদে আ’যম রাজারবাগ শরীফ উনার মহাসম্মানিত হযরত মুর্শিদ ক্বিবলা আলাইহিস সালাম উনার ফতওয়া মেনে নিয়ে ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্যের পক্ষের লোকদের বিরোধিতা করছে, যেটা প্রশংসার দাবী রাখে। আমরা আশা করবো, তারা সর্বপ্রকার ছবি তোলা ও ভিডিও করা থেকে বিরত হয়ে পরিপূর্ণ শরীয়তের আমল করবে এবং সাধারণ জনগণকে সেলফী তোলা, ছবি তোলা, ভিডিও করা, মূতির্- ভাস্কর্য বানানোর ভয়ানক পরিণতির জন্য সর্তক করবে।
প্রাণীর ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত পর্যালোচনা:
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত “সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান” এর ৪৭৩ পৃষ্ঠায় মূর্তি শব্দের শাব্দিক অর্থ লিখা হয়েছে- দেহ, আকৃতি, রূপ, প্রতিমা।
ভাস্কর্য শব্দের আভিধানিক পরিচয়:
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত “সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান” এর ৪৩৭ পৃষ্ঠায় ভাস্কর্র্য শব্দের শাব্দিক অর্থ লিখা হয়েছে- প্রস্তরাদি খোদাই করে বা তা দিয়ে মূর্তি নির্মাণের কাজ, sculpture ।
প্রতিমা শব্দের আভিধানিক পরিচয়:
বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত “সংক্ষিপ্ত বাংলা অভিধান” এর ৩৬৪ পৃষ্ঠায় প্রতিমা শব্দের শাব্দিক অর্থ লিখা হয়েছে- প্রতিকৃতি, প্রতিমূর্তি, হাতে তৈরী মাটির কল্পিত মূর্তি, দেবমূর্তি, দেববিগ্রহ।
উপরোক্ত মূর্তি, ভাস্কর্য ও প্রতিমা শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে পবিত্র কুরআন শরীফ ও পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে যে শব্দসমূহ ব্যবহৃত হয়েছে সেগুলো হলো- اَصْنَامٌ، تَصْوِيْرٌ تَـمَاثِيْلٌ، الْأَوْثَانِ، أَوْثَانًا، اَلْأَنْصَابُ،
নিম্নে শব্দসমূহ বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হলো-
اَصْنَامٌ (‘আছনামুন’) শব্দের অর্থ হলো- মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, দুর্গন্ধ, অপবিত্র।
تَـمَاثِيْلٌ (‘তামাছীলুন’) শব্দ تِـمْثَالٌ (তিমছালুন) শব্দের বহুবচন। অর্থাৎ تـِمْثَالٌ (‘তিমছালুন’) শব্দ একবচন এবং এর বহুবচন হলো تَـمَاثِيْلٌ، (‘তামাছীলুন)। মূল শব্দ হলো مَثَلٌ (মাছালুন)। সুতরাং تـِمْثَالٌ (তিমছালুন) ও تَـمَاثِيْلٌ (‘তামাছীলুন’) এবং مَثَلٌ (মাছালুন) শব্দের অর্থ হলো মূর্তি, প্রতিমা, ভাস্কর্য, প্রতিমূর্তি, প্রতিচ্ছবি, আকৃতি, নক্্শা, অঙ্কিত চিত্র।
الْأَوْثَانِ ও أَوْثَانًا শব্দ وَثَنٌ (ওয়াছানুন) শব্দের বহুবচন। অর্থাৎ وَثَنٌ (ওয়াছানুন) শব্দ একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَوْثَانٌ (আওছানুন)। সুতরাং وَثَنٌ (ওয়াছানুন) এবং اَوْثَانٌ শব্দের অর্থ হলো- মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, পুতুল।
اَلْأَنْصَابُ শব্দ এসেছে نُصُبٌ (নুছুবুন) শব্দ থেকে। আর نُصُبٌ (নুছুবুন) শব্দ একবচন এবং এর বহুবচন হলো اَنْصَابٌ (আনছাবুন)। সুতরাং نُصُبٌ (নুছুবুন) এবং انْصَابٌ (আন্্ছাবুন) শব্দের অর্থ হলো- মূর্তি, প্রতিমা, প্রতিমূর্তি, স্তম্ভ, স্থাপিত, পূজা বা বলীর বেদী, স্ট্যেচু (statue), ভাস্কর্য, পুতুল।
تَصْوِيْرٌ (তাছউয়ীর) শব্দটি ছবি, মূর্তি ও ভাস্কর্য অর্থে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মূল শব্দ হিসেবে صورة ‘ছূরতুন’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। এ শব্দটি একবচন। বহুবচন হচ্ছে صور ‘ছুয়ারুন’ শব্দটি। যিনি ছূরত বা আকৃতি প্রদান করেন উনাকে مصور‘মুছাওউইর’ বলা হয়। (সমূহ আরবী অভিধান)
উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, মূর্তি-প্রতিমা, ছবি একই বিষয়। এ দুটিকেই পূজা ও সম্মান প্রদর্শনের জন্য তৈরি করা হয়। আর ভাস্কর্য তৈরির ক্ষেত্রে সাধারণতঃ তিনটি অবস্থার সৃষ্টি হয়। যথা-
১. পূজা বা সম্মান প্রদর্শনের জন্য বানানো হয়।
২. পূজা বা সম্মান প্রদর্শনের জন্য বানানো হয় না, স্রেফ সৌন্দর্য প্রদর্শনের জন্য বানানো হয়।
৩. প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরি করা হয়।
যদি ভাস্কর্য প্রথম অবস্থার সাথে মিলে যায় অর্থাৎ পূজা বা সম্মান প্রদর্শনের জন্য বানানো হয় তাহলে তা জীব-জন্তুর প্রতিকৃতি হোক বা না হোক উভয় অবস্থায় হারাম, কুফর ও শিরকের অন্তর্ভুক্ত।
আর যদি পূজা বা সম্মান প্রদর্শনের জন্য বানানো না হয়, প্রাণী বা জীব-জন্তুর (মানুষ, হাতি, ঘোড়া, পশু-পাখি ইত্যাদির) প্রতিকৃতি প্রকাশ না পায় এবং তাতে সম্মানিত শরীয়ত উনার খিলাফ কোনো বিষয় অন্তর্ভুক্ত না থাকে তবে এহেন ভাস্কর্য তৈরি করা মুবাহ তথা বৈধ। যেমন- মতিঝিলের শাপলা চত্বর।
কিন্তু যদি কোনো প্রাণী বা জীব-জন্তুর আকৃতিতে ভাস্কর্য বানানো হয় তবে তা সর্বাবস্থায় হারাম, নাজায়িয ও কুফরী হবে। আর যারা কুফরী করে তারা পবিত্র দ্বীন ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে মুরতাদ হয়ে যায়। সম্মানিত শরীয়ত উনার মধ্যে মুরতাদের একমাত্র শাস্তি হলো মৃত্যুদন্ড।
বিষয়টি ছকের মাধ্যমে নিচে উপস্থাপন করা হলো-

মোটকথা, যে মাধ্যমেই প্রাণীর ছবি তোলা বা মূর্তি-ভাস্কর্য নির্মাণ করা হোক না কেন তা যদি প্রাণীর প্রতিকৃতি হয় তবে তা স্পষ্ট হারাম হবে। যেমন- ক্যামেরা, কলম, রং তুলি, কাঠ, বাঁশ, কাগজ, প্লাস্টিক, পাথর-মাটি, প্রোগ্রামিং, আলোকরশ্মি, ছায়া (shadowgraphy) ইত্যাদি যত মাধ্যম আছে; চাই তা খোদাই করা হোক বা খোদাই করা না হোক, ছায়া থাকুক বা না থাকুক, তা দিয়ে যদি কোনো প্রাণীর প্রতিকৃতি প্রকাশ পায় তবে তা হারাম হবে। আর পূজা ও সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে হলে সুস্পষ্ট শিরক ও কুফরী হবে।
পবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّـمَ بُعِثْتُ لِكَسْرِ الْـمَزَامِيْرِ وَالْاَصْنَامِ
অর্থ: “নূরে মুজাসসাম হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি ইরশাদ মুবারক করেন, আমি বাদ্য-যন্ত্র ও মূর্তি ধ্বংস করার জন্যে প্রেরিত হয়েছি।” (তাফসীরে রূহুল বয়ান)
পবিত্র সূরা হাশর শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক হয়েছে-
هُوَ اللهُ الْـخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ
অর্থ: “তিনিই মহান আল্লাহ পাক যিনি সৃষ্টিকর্তা, উদ্ভাবক, আকৃতিদাতা।” (পবিত্র সূরা হাশর শরীফ : পবিত্র আয়াত শরীফ ২৪)
অত্র পবিত্র আয়াত শরীফ উনার মধ্যে মহান আল্লাহ পাক উনার একখানা ছিফতী নাম মুবারক الـمصور ‘আকৃতিদাতা’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ মানুষ অথবা কোন প্রাণীর ছূরত বা আকৃতি প্রদান করা এটা মহান আল্লাহ পাক উনার জন্যই খাছ বা নির্দিষ্ট। অন্য কারো জন্য জায়িয নয়।
আর তাই পবিত্র হাদীছ শরীফে বর্ণিত রয়েছে-
ان اشد الناس عذابا عند الله الـمصورون
অর্থ : “নিশ্চয়ই মানুষের মধ্যে ঐ ব্যক্তিকে মহান আল্লাহ পাক তিনি কঠিন শাস্তি দিবেন, যে ব্যক্তি প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরী করে।” (বুখারী শরীফ ২য় খ-, পৃষ্ঠা ৮৮০)
অপরদিকে প্রাণহীন বস্তুর প্রতিকৃতির বৈধতার ব্যাপারে হাদীছ শরীফে বর্ণিত আছে-
عَنْ سَعِيدِ بْنِ أَبِى الْـحَسَنِ قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى ابْنِ عَبَّاسٍ فَقَالَ إِنِّى رَجُلٌ أُصَوِّرُ هَذِهِ الصُّوَرَ فَأَفْتِنِى فِيهَا. فَقَالَ لَهُ اُدْنُ مِنِّى. فَدَنَا مِنْهُ ثُـمَّ قَالَ اُدْنُ مِنِّى. فَدَنَا حَتَّى وَضَعَ يَدَهُ عَلَى رَأْسِهِ قَالَ أُنَبِّئُكَ بِـمَا سَـمِعْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم سَـمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ كُلُّ مُصَوِّرٍ فِى النَّارِ يَجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُورَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسًا فَتُعَذِّبُهُ فِى جَهَنَّمَ. وَقَالَ إِنْ كُنْتَ لاَ بُدَّ فَاعِلاً فَاصْنَعِ الشَّجَرَ وَمَا لاَ نَفْسَ لَهُ.
অর্থ : “হযরত সাঈদ রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি বলেন, এক ব্যক্তি হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনার নিকট এসে বলল, আমি এমন এক ব্যক্তি যে প্রাণীর প্রতিকৃতি অংকন করি, সুতরাং এ ব্যাপারে আমাকে ফতওয়া দিন। হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু উনাকে বললেন, তুমি আমার নিকটবর্তী হও। সে ব্যক্তি উনার নিকটবর্তী হল। পুণরায় বললেন, তুমি আরো নিকটবর্তী হও। সে আরো নিকটবর্তী হলে হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা তার মাথায় হাত রেখে বললেন, আমি নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে এ ব্যাপারে যা বলতে শুনেছি তোমাকে তা বলব। নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি বলেছেন, “প্রত্যেক প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরীকারীই জাহান্নামে যাবে। এবং মহান আল্লাহ পাক তিনি প্রত্যেকটি প্রতিকৃতিকে প্রাণ দিবেন এবং সেই প্রতিকৃতিগুলো তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দিতে থাকবে।” হযরত ইবনে আব্বাস রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু তিনি আরো বললেন, তোমার যদি প্রতিকৃতি আঁকতেই হয় তবে, গাছ-পালা বা প্রাণহীন বস্তুর প্রতিকৃতি আঁক। (মুসলিম শরীফ ২য় খ-, পৃষ্ঠা ২০২)
ঊল্লেখ্য, ইসলামী শরীয়তে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা দেশ দলীল নয়। এরপরও তারা কথায় কথায় যেই সৌদি আরবের দলীল দেয়, সেই সৌদি আরবের ফতওয়া বোর্ডও প্রাণীর ছবি, মূর্তি-ভাস্কর্য হারাম বা নিষিদ্ধ বলে ফতওয়া দিয়েছে। ফতওয়াতে ক্যামেরায় ছবি তোলার বিষয়ে একটা প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে,
السؤال الثامن من الفتوى رقم ( ৩৫৯২ ):
س৮: هل التصوير بالكاميرا حرام أم لا شيء على فاعله؟
ج৮: نعم، تصوير ذوات الأرواح بالكاميرا وغيرها حرام، وعلى من فعل ذلك أن يتوب إلى الله ويستغفره ويندم على ما حصل منه ولا يعود إليه.
প্রশ্ন: ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তোলা হারাম কিনা, যারা এ কাজ করবে তাদের বিষয়ে ফায়সালা কি?
উত্তর: হ্যাঁ হারাম। প্রাণীর ছবি তা ক্যামেরায় হোক বা যেকোন মাধ্যমেই হোক তা হারাম। যারা এ কাজগুলো করবে তাদের তওবা করতে হবে। এ কাজের জন্য অনুতপ্ত হতে হবে এবং এ ধরনের হারাম কাজের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয় সে বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে।” (ফতওয়া আল লাজনাতু দায়িমা লি বুহুছিল ইলমিয়া ওয়াল ইফতা ১ম খ- ৪৬১ পৃষ্ঠা; ফতওয়া নং ৩৫৯২)
সুতরাং ক্যামেরা ব্যবহার করে নিজের সেলফী তোলা বা কোন প্রাণীর ছবি, মূর্তি, ভাস্কর্য ও প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরি করা হারাম।
তাছাড়া প্রাণীর মূর্তি, প্রতিকৃতি, ভাস্কর্য হারাম হওয়ার বিষয়ে উম্মতের ইজমাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
واما اتـخاذ الصورة وعمل التصوير فهو حرام مطلقا بالاجـماع سواء كانت الصورة صغيرة اوكبيرة مـمتهنة اوغير مـمتهنة وقد تواترت الاحاديث الصريـحة فى ذلك.
অর্থ: “প্রাণীর মূর্তি-ভাস্কর্য ও প্রাণীর ছবি ঘরে রাখা বা এগুলোর চর্চা করা ইজমা মতে হারাম। এগুলো ছোট হোক, বড় হোক এবং লাঞ্ছনার জন্য হোক অথবা সম্মানের জন্য হোক একই হকুম। আর এ ব্যাপারে অসংখ্য মুতাওয়াতির হাদীছ শরীফ প্রকাশ্যভাবে বর্ণিত আছে। (আত তা’লীকুছ ছবীহ আলা মিশকাতিল মাছাবীহ শরীফ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছদ পরিচ্ছেদ: প্রাণীর ছবি মূর্তি-ভাস্কর্যের শরয়ী বিধান ১ম অনুচ্ছেদ ৫ম খ- ১০ পৃষ্ঠা)
মূলকথা হলো, পবিত্র কুরআন শরীফ, পবিত্র হাদীছ শরীফ, ইজমা শরীফ ও ক্বিয়াস শরীফ উনাদের অসংখ্য দলীল-আদিল্লার ভিত্তিতে প্রাণীর ছবি, মূর্তি ও ভাস্কর্য সম্পূর্ণরূপে হারাম। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় সংক্ষেপ করা হলো। (বিস্তারিত জানার জন্য মাসিক আল বাইয়্যিনাত শরীফ ১৬৮ থেকে ২৩৭তম সংখ্যা পাঠ করুন)
মহান আল্লাহ পাক বিশ্বের সমস্ত মুসলমানকে দ্বীন ইসলামের হাক্বীক্বী বুঝ দান করুন এবং তদানুযায়ী আমল করার তাওফীক্ব দান করুন। আমীন।
ফতওয়া বিভাগের পক্ষে-
১. মুফতীয়ে আ’যম আবুল খায়ের মুহম্মদ আযীযুল্লাহ
২. মুফতী সাইয়্যিদ শুয়াইব আহমদ
৩. হাফিজুল হাদীছ মুহম্মদ ফজলুল হক্ব
৪. মুফতী মুহম্মদ আলমগীর হুসাইন
৫. মুফতী মুহম্মদ জাহাঙ্গীর হুসাইন
সূত্রঃ http://al-ihsan.net/Fotwa_chobi_murti_vaskorjo_haram.pdf
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মিশরের প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ড. ইউসুফ আল কারযাভী বলেছেন, ‘ইসলামে মূর্তি ও ভাস্কর্য অবৈধ।’ তিনি এই বিধানগত দিক ছাড়াও ইসলামের মৌলিক আদর্শ ও চেতনার সঙ্গে মূর্তি ও ভাস্কর্যের বিরোধ সম্পর্কে প্রমাণসিদ্ধ আলোচনা করেন।
তার আলোচনার সারসংক্ষেপ তুলে হল:
ক. ইসলামে প্রাণীর প্রতিকৃতি নিষিদ্ধ হওয়ার অন্যতম তাৎপর্য হল, মুসলমানের চিন্তা-চেতনা এবং মন-মানসকে শিরকের কলুষ থেকে পবিত্র রাখা। তাওহীদের বিষয়ে ইসলাম অত্যন্ত সংবেদনশীল। এবং এটা অত্যন্ত যৌক্তিক ও বাস্তবসম্মত। কেননা, অতীত জাতিসমূহে মূর্তির পথেই শিরকের অনুপ্রবেশ ঘটেছিল।
খ. কোনো কোনো ভাস্কর তার নির্মিত বস্ত্তর ব্যাপারে এতই মুগ্ধতার শিকার হয়ে যায় যে, যেন ওই প্রস্তরমূর্তি এখনই জীবন্ত হয়ে উঠবে! এখনই তার মুখে বাক্যের স্ফূরণ ঘটবে! বলাবাহুল্য, এই মুগ্ধতা ও আচ্ছন্নতা তাকে এক অলীক বোধের শিকার করে দেয়। যেন সে মাটি দিয়ে একটি জীবন্ত প্রাণী সৃষ্টি করে ফেলেছে! এজন্যই নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-‘যারা এইসব প্রতিকৃতি প্রস্তুত করে তাদেরকে কিয়ামতের দিন আযাব দেওয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে, ‘যা তোমরা সৃষ্টি করেছিলে তাতে প্রাণসঞ্চার কর।’
গ. আরো দেখা যায় যে, এই শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা কোনো সীমারেখার পরোয়া করে না। নগ্ন ও অর্ধনগ্ন নারীমূর্তি, মূর্তিপূজার বিভিন্ন চিত্র ও নিদর্শন ইত্যাদি সবকিছুই নির্মিত হতে থাকে।
ঘ. তদুপরি এগুলো হচ্ছে অপচয় ও বিলাসিতার পরিচয়-চিহ্ন। বিলাসী লোকেরা বিভিন্ন উপাদানে নির্মিত প্রতিকৃতিসমূহের মাধ্যমে তাদের কক্ষ, অট্টালিকা ইত্যাদির ‘সৌন্দর্য বর্ধন’ করে থাকে। ইসলামের সঙ্গে এই অপচয় ও বিলাসিতার কোনো সম্পর্ক নেই।
কীর্তিমানদের স্মৃতিরক্ষার প্রশ্নে ইসলামী আদর্শ এবং অনৈসলামিক পদ্ধতি সম্পর্কে তুলনামূলক আলোচনা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘মানুষ যত বড়ই হোক না কেন তার প্রকৃত অবস্থা থেকে তাকে উন্নীত করা ইসলামের দৃষ্টিতে নিন্দিত। স্বয়ং নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর নিজের সম্পর্কেও সাবধান করে বলেছেন, ‘তোমরা আমার এমন অবাস্তব প্রশংসা করো না যেমন খৃষ্টানরা ঈসা ইবনে মারইয়াম সম্পর্কে করেছে। তোমরা আমার সম্পর্কে বলবে, আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসূল।’ (সহীহ বুখারী)
শ্রদ্ধা নিবেদনের ব্যাপারে যে দ্বীনের আদর্শ এই সে কখনও কোনো মানুষের সম্মানে মূর্তির মতো স্মারকস্তম্ভ নির্মাণে সম্মত হতে পারে না, যার পিছনে অজস্র অর্থ ব্যয় করা হবে, যার প্রতি ভক্তি ও সম্মানের সঙ্গে লোকেরা অঙুলি নির্দেশ করবে।
ইসলামের দৃষ্টিতে অমরত্ব লাভ হয় আল্লাহ পাকের সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে। এই অমরত্বই মুমিনের লক্ষ্য। আর যেসব ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যেও স্মৃতিরক্ষার প্রয়োজন হয় সেখানে তার উপাদান ইট-পাথরের ভাস্কর্য নয়; বরং হৃদয়ের ভালোবাসা, কর্ম ও কীর্তির সশ্রদ্ধ আলোচনা এবং চিন্তা ও চেতনায় আদর্শ অনুসরণের প্রেরণাই হল অমরত্বের উপাদান।
হাবিবুল্লাহ হুজুর পাক সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং উনার খলীফাগণ আলাইহিমুস সালাম উনার এবং ইসলামের মহান পূর্বসূরীদের অমর স্মৃতি পাথরের ভাস্কর্যের দ্বারা সংরক্ষিত হয়নি। তা হয়েছে প্রজন্ম পরম্পরায় মানুষের হৃদয়ে এবং তাদের কর্ম ও অবদানের সুরভিত আলোচনায়। এটা হল ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি। অন্যদিকে ভাস্কর্যভিত্তিক স্মৃতিরক্ষার পদ্ধতি হচ্ছে অত্যন্ত স্থূল ও পশ্চাৎপদ চিন্তার ফসল।
নিউজ ডেস্ক: “মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল” এর সংবাদ অনুযায়ী বাংলাদেশে সোমবার দিবাগত সন্ধ্যায় পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাসের চাঁদ দেখা গেছে। অর্থাৎ মঙ্গলবার ১লা রবীউছ ছানী।
উল্লেখ্য, ১৪৪২ হিজরী সনের পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাসে চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য গতকাল দিবাগত সন্ধ্যায় “মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল” এর এক পর্যালোচনা মজলিস রাজারবাগ দরবার শরীফে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
“মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল” এর কেন্দ্রীয় কমিটির তরফ থেকে জানানো হয়, গতকাল দিবাগত সন্ধ্যায় রাজধানী ঢাকা, খাগড়াছড়ি, রংপুর, লক্ষ্মীপুর অঞ্চলের প্রতিনিধিরা পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার খবর পরিবেশন করেছেন।
মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল এর মহাসম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি চাঁদ দেখার সংবাদ আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে ঘোষণা করেন, আজ ২০ সাদিস ১৩৮৮ শামসী (১৭ নভেম্বর ২০২০ খৃঃ), মঙ্গলবার থেকে ১৪৪২ হিজরী সনের পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাসের ১লা তারিখ।
নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামীকাল সোমবার ২৯শে রবীউল আউওয়াল শরীফ দিবাগত সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের পর বাংলাদেশে পবিত্র রবীউছ ছানী মাসের চাঁদ তালাশ করতে হবে।
আগামীকাল দিবাগত সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল ২০ সাদিস ১৩৮৮ শামসী, ১৭ নভেম্বর ২০২০ খৃঃ, মঙ্গলবার হবে ১৪৪২ হিজরী পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাসের ১লা তারিখ।
আর কোনো কারণে আজ দিবাগত সন্ধ্যায় চাঁদ দেখতে না পাওয়া গেলে, তবে সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহুরিল আযম শরীফ মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস ৩০ দিন পূর্ণ করে আগামী ২১ সাদিস ১৩৮৮ শামসী, ১৮ নভেম্বর ২০২০ খৃঃ, বুধবার হবে পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাসের ১লা তারিখ।
উল্লেখ্য, ১৪৪২ হিজরী সনের পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আজ দিবাগত সন্ধ্যায় ‘মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল’ এর আলোচনা মজলিস রাজারবাগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হবে। ‘মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল’ এর সকল প্রতিনিধিকে অতি সতর্কতার সাথে চাঁদ তালাশ করতে হবে।
বাংলাদেশের যেকোনো স্থান থেকে যারা চাঁদ দেখতে পাবেন তাদেরকে মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল এর নিম্নলিখিত নম্বরসমূহে তথ্য প্রদানের জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
মোবাইল নম্বরসমূহ- ০১৭১৩-৪৫৬৮৬৫, ০১৭১৩-১১৬৯৩৩, ০১৭১১-১৭৮৬৬১, ০১৭১১-২৭২৭৮৫, ০১৭১২-৮১৯১৭৭, ০১৭১২-২২১২৬৭, ০১৭১১-২৩৮৪৪৭, ০১৭১৪-৬২৭৩৮৮, ০১৭১৬-৬৬৫৬৯৩, ০১৫৫২-৪১৫২৩৩, ০১৭১১-২৭২৭৮২।
বাংলাদেশের জন্য ১৪৪২ হিজরী সনের পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাসের চাঁদের প্রতিবেদন:
বাংলাদেশ পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাসের চাঁদ তালাশ করবে আজ ২৯ রবীউল আউওয়াল শরীফ ১৪৪২ হিজরী, ১৯ সাদিস ১৩৮৮ শামসী, ১৬ নভেম্বর ২০২০ খৃঃ. সোমবার দিবাগত সন্ধ্যায়।
আজ চাঁদ দিগন্তরেখার ১২ ডিগ্রীর উপরে অবস্থান করবে এবং চাঁদের বয়স হবে প্রায় ৩১ ঘণ্টা।
আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত ৫টা ১৩ মিনিটে এবং চন্দ্রাস্ত ৬টা ২০ মিনিটে অর্থাৎ ১ ঘন্টা ৭ মিনিট চাঁদ আকাশে অবস্থান করে অস্ত যাবে।
আজ চাঁদ অবস্থান করবে ২৩৯ ডিগ্রী আযিমাতে এবং সূর্যের অবস্থান থাকবে ২৪৯ ডিগ্রী আযিমাতে।
সূর্যাস্তের সময় চাঁদ ১৬ ডিগ্রীর বেশী কোণ করে সূর্য থেকে সরে থাকবে এবং চাঁদের ০২.১৫% আলোকিত থাকবে।
আকাশ পরিষ্কার থাকলে আজ বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রবীউছ ছানী শরীফ মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে।
নিউজ ডেস্ক: সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম মহাসম্মানিত রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার চাঁদ দেখা যায়নি আগামী (০২ সাদিস শামসী) ৩০ শে অক্টোবর শুক্রবার সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ মহাসম্মানিত ১২ই শরীফ তথা ঈদে মীলাদুন্নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
‘মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল’ এর সংবাদ অনুযায়ী শনিবার দিবাগত সন্ধ্যায় বাংলাদেশের আকাশে পবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার চাঁদ দেখা যায়নি।
শনিবার (১৭ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
উল্লেখ্য, ১৪৪২ হিজরী সনের সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিশ শুহূরিল আ’যম মহাপবিত্র রবিউল আউওয়াল শরীফ উনার চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনা এবং এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আজ সন্ধ্যায় ‘মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল’ উনার এক পর্যালোচনা মজলিস পবিত্র রাজারবাগ শরীফ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়।
“মাজলিসু রু’ইয়াতিল হিলাল” এর কেন্দ্রীয় কমিটির তরফ থেকে জানানো হয়, রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের নিজস্ব প্রতিনিধিগণ পবিত্র রবিউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার চাঁদ দেখতে পাওয়া যায়নি বলে খবর পরিবেশন করেন।
‘মাজলিসু রুইয়াতিল হিলাল’ উনার মহাসম্মানিত প্রতিষ্ঠাতা ও পৃষ্ঠপোষক মুজাদ্দিদে আ’যম, হাবীবুল্লাহ, জামিউল আলক্বাব, আহলু বাইতে রসূল, মাওলানা সাইয়্যিদুনা হযরত ইমামুল উমাম আলাইহিস সালাম তিনি চাঁদ দেখার সংবাদ আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে ঘোষণা করেন- আগামীকাল ইয়াওমুল ইছনাইনিল আযীম (সোমবার) (২১ খমিস) শামসী (১৯ অক্টোবর, খৃ.) ১৪৪২ হিজরী সনের সাইয়্যিদুল আসইয়াদ, সাইয়্যিদুশ শুহূর, শাহরুল আ’যম মহাপবিত্র রবীউল আউওয়াল শরীফ মাস উনার ১লা তারিখ। এবং সে মুতাবিক সাইয়্যিদু সাইয়্যিদিল আ’দাদ শরীফ মহাসম্মানিত ১২ই শরীফ পালিত হবে আগামী ০২ সাদিস (শামসী), ৩০ অক্টোবর (খৃ.), জুমুয়াবার।
হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তিনি মহাসম্মানিত ও মহাপবিত্র হাদীছ শরীফ উনার মধ্যে ইরশাদ মুবারক করেন,
مَنْ حَفِظَ سُنَّتِـىْ اَكْرَمَهُ اللهُ تَعَالـٰى بِاَرْبَعِ خِصَالٍ اَلْـمَحَبَّةُ فِـىْ قُلُوْبِ الْبَرَرَةِ وَالْـهَيْبَةُ فِـىْ قُلُوْبِ الْفَجَرَةِ وَالسَّعَةُ فِـى الرِّزْقِ وَالثِّقَةُ فِـى الدِّيْنِ
অর্থ: “যে ব্যক্তি আমার একটি সম্মানিত সুন্নত মুবারক হেফাযত করবে, আঁকড়িয়ে ধরবে, সম্মানিত সুন্নাত মুবারক উনার উপর আমল করবে, মহান আল্লাহ পাক তিনি তাকে ৪টি স্বভাব মুবারক দ্বারা সম্মানিত করবেন। সুবহানাল্লাহ!
আর তা হচ্ছে-
১. তার অন্তরে নেক কাজের প্রতি মুহব্বত পয়দা করে দিবেন,
২. তার অন্তরে পাপ কাজের ব্যাপারে ভীতি সৃষ্টি করে দিবেন,
৩. তার রিযিক্বে প্রাচুর্যতা দান করবেন এবং
৪. তাকে দ্বীনের উপর অবিচল রাখবেন।” সুবহানাল্লাহ!
(তাফসীরে রূহুল বায়ান, তাফসীরে হাক্কী)
মুহম্মদ আল আমীন
লেখক ও গবেষক,মুহম্মদীয়া জামিয়া