খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: একসময় পাহাড়ের পর পাহাড়ে শোভা পেত জুম চাষ। জুম চাষে ব্যস্ত সময় কাটাতো পাহাড়ের জুমিয়ারা। সময়ের ব্যবধানে পাহাড়ি টিলা ভূমিতে জুম চাষ নিয়ে ব্যস্ত থাকা সেই জুমিয়ারা আগাম আনারস চাষে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছে।
আর জুমিয়াদের হাত ধরেই ‘পাহাড়ের আগাম আনারসের চাহিদা বাড়েছে সমতলে’। স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকারদের হাত ধরেই পাহাড়ের আগাম আনারস জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
গত কয়েক বছর ধরে পাহাড়ি জেলাগুলোতে ‘হানিকুইন’ জাতের আনারসের চাষ হচ্ছে। পাহাড়ি টিলা ভূমিতে চাষ করা আনারস রসালো ও সুমিষ্ট হওয়ায় এর চাহিদাও অনেক বেশি। মৌসুমে আনারস চাষে যেখানে চাষিদের লোকসান গুণতে হতো সেখানে মৌসুমের বাইরে ‘হানিকুইন’ জাতের আগাম আনারস চাষে বাড়তি লাভের মুখ দেখছে চাষিরা। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মহালছড়ির আগাম আনরাস চাষিদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
মহালছড়ির মধ্য আদাম এলাকায় পাহাড়ি টিলা ভূমিতে আগাম ১৬ হাজার আনারসের চারা রোপণ করেছেন চাষি সুলক্ষণ চাকমা। তার লাগানো ১৬ হাজার চারার মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার গাছে আগাম ফলন এসেছে। আগাম আনারস রসালো এবং সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা অনেক বেশি।
মৌসুমী আনারস চাষের চেয়ে আগাম আনারস চাষে খরচ বেশি হলেও লোকসানের ভয় থাকে না। আনারসের বাজার দর বেশি থাকায় চাষিরা লাভের মুখও দেখছে। বলেছেন পাহাড়ি কৃষক সুলক্ষণ চাকমা।
তিনি জানান, সমতলের বিভিন্ন জেলায় আগাম আনারসের চাহিদা থাকায় বাজারজাত নিয়েও কোনো দুশ্চিন্তা করতে হয় না। স্থানীয় বা বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেই কিনে নিচ্ছে পাহাড়ের আনারস। এবছর তিনি আকার অনুযায়ী প্রতি পিস আনারস ১৪ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলেও জানান।
দাম ভালো পাওয়ায় অনেকেই আগাম আনারস চাষে ঝুঁকছেন জানিয়ে আনারস চাষি রিপন চাকমা বলেন, আগাম ফল আসলে ভালো লাভে বিক্রি করা যায়। সমতলের ভোক্তাদের কাছে পাহাড়ের আগাম আনারসের চাহিদাও ব্যাপক। পাইকররা বাগান থেকে আনারস সংগ্রহ করেন বলে চাষিদের ভোগান্তি অনেকাংশে কম।
মহালছড়ির বিভিন্ন বাগান থেকে আগাম আনারস সংগ্রহ করে নোয়াখালীর বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন নোয়াখালীর পাইকারী ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করার কারণে কম দামে কিনে নিতে পারি। মৌসুমে প্রতি পিস আনারস ৪ থেকে ৫ টাকায় কিনলেও এখন ১৪ থেকে ২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী মো: আব্দুল জব্বার বলেন, রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় বরাবরই সমতলের বিভিন্ন জেলায় পাহাড়ের আনারসের চাহিদা বেশি। তবে আগাম আনারস হওয়ায় মৌসুমের তুলনায় দাম একটু বেশি হলেও চাহিদা অনেক বেশি। অসময়ে আনারস বাজারে পাওয়ায় দাম নিয়ে মানুষ কোনো চিন্তা করে না। সমতলের মানুষ দামের চেয়ে স্বাদটাকেই বেশি গ্রহণ করে।
আগাম আনারসের চাষ হওয়ায় শ্রমিকরা সারা বছরই আনারস বাগানে কাজ করে জানিয়ে শ্রমিক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আগাম আনারসের চাষ বাড়ার সাথে সাথে কর্মসংস্থাননেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমাদেরকে কাজ নিয়ে ভাবতে হয় না। কাজ করে ভালোই চলছে আমাদের সংসার। এতে আমরা অনেক খুশি।
পাহাড়ে উৎপাদিত আগাম আনারস স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সমতলের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত হচ্ছে জানিয়ে মহালছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আব্দুল জব্বার জানান, ফলে স্থানীয় কৃষকরা আগাম আনারস চাষে ঝুঁকছেন। আগাম আনারস চাষ পাহাড়ে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে বলেও মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।
নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের লেবুখালী আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত নিজস্ব দুটি জাতের তরমুজের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার লেবুখালী আঞ্চলিক কৃষি উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ জাত দুটি উদ্ভাবন করে। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ডের সচিব বলাই কৃষ্ণ হাজরা এ জাত দুটির নিবন্ধন প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেছেন। এর ফলে বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ জাত দুটি মুক্তায়িত হয়েছে এবং এতে করে সরকারের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে আর বাংলাদেশের কৃষক পর্যায়ে এক নতুন মাত্রা যোগ হলো।
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, হাইব্রিড জাতের এই তরমুজ দেশের সব অঞ্চলে চাষ করা যাবে। বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ একটির ভিতরে (মাংসল অংশ) হলুদ অপরটির ভিতরে (মাংসল অংশ) লাল রঙের। এ জাতের প্রতিটি গাছে দুই থেকে তিনটি ফলন হবে, যা গড়ে চার থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। গাছ লাগানোর ৯০ থেকে ১০০ দিন সময় প্রয়োজন হয় ফলনে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ উপকূলে কৃষকের লাভজনক এই ফলটি চাষে প্রতিবছর প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় তরমুজের বীজ সংগ্রহ করতে। প্রতিবছর তরমুজের বীজ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। আর এ বাবদ বছরে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয় হয়। আর এসব বীজ হাইব্রিড হওয়ায় উৎপাদিত ফল থেকে বীজ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া প্রতিবছর আলাদা আলাদা জাতের বীজ আমদানি করার ফলে এর অঙ্কুরোদ্গম, সফল পরিচর্যা করতে কৃষকদের বিভিন্ন সময় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। তাই দেশের এলাকা সহিষ্ণু তরমুজের নিজস্ব জাত উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।
লেবুখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষনা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বারি তরমুজ বিজ্ঞানী রেজাউল করিম জানান, জাত দুটি ওপেন পলিনেটেড ভ্যারাইটি (পরাগায়ন) হওয়ায় কৃষকরা এ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন এবং অঙ্কুরদ্গম হবে। ফলে কৃষককে প্রতিবছর বীজ ক্রয় করতে হবে না। অনেক সময় আমদানি করা বীজ অঙ্কুরদ্গম হয় না। তখন কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হন। পাশাপাশি শুধু গ্রীষ্মকালেই নয় এই জাত দুটি সারা বছর আবাদ করা যাবে। কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বারি তরমুজ বিজ্ঞানী ড. মো. ইদ্রিস আলী হাওলাদার জানান, জাত দুটি অনুমোদন পাওয়ায় তরমুজের বীজ আর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না। তাই দেশের টাকা দেশেই থাকবে। অপর দিকে তরমুজটি যেমন খেতে মিষ্টি, তেমনি এর সাইজও অনেকটা ফ্যামিলি সাইজের। ফলে ক্রেতারাও এটি কিনতে আকৃষ্ট হবেন।
নাটোর সংবাদদাতা: নাটোর সদর উপজেলার হালসা ইউনিয়নের প্রবাসী আব্দুর রহমানের জ্যেষ্ঠ সন্তান আজিজুর রহমান। তিনি জানান, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে বাবা-মা কখনই কিছু চাপিয়ে দিতেন না। সবসময় তার ইচ্ছাকেই অগ্রাধিকার দিতেন। এ ব্যাপারে তার বাবার ভূমিকাই মুখ্য। আজিজুর নিজ জেলা থেকে শুরু করে ঘুরেছেন বেশ কয়েকটি জেলা। টান তার কৃষির দিকে। কিভাবে উদ্যোক্তা হওয়া যায়, কিভাবে বিজ্ঞানভিত্তিক উপায়ে কৃষির উৎপাদন বাড়ানো যায় সেদিকেই তার আগ্রহ।
আমরা জানতে চাই এই উদ্যমী তরুণের পথচলা নিয়ে। জবাবে হেসে উঠেন আজিজুর। বলেন, শুরুতে অনেকেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করতো। বলতো- পড়াশোনা শেষ করে ভালভাল চাকরি সুযোগ ছেড়ে কেউ কোনদিন এভাবে কৃষি কাজে নামে? আমি তাদের কথায় কিছু মনে না করলেও আরো বেশি আগ্রহী হয়ে উঠি। আমাকে সফল হতেই হবে। অন্যদেরকে নিয়ে এগুতে হবে।
তিনি বলেন, ডিপ্লোমা শেষ করে আর দশজন যুবকের মতো আমিও চাকরি খুঁজি। এক সময় পেয়েও যাই। যোগদান করি। কিন্তু নিজের মধ্যে সবসময় কিছু একটা করার তাড়না অনুভব করতে থাকি। যেখানে আমিসহ আরো অনেকেই আমার সঙ্গে যুক্ত থাকবে। সে চিন্তা থেকে আজকে আমার কৃষি উদ্যোক্তা হওয়া শুরু। চাকরি ছেড়ে দেই। শুরুতে অনেকের নেতিবাচক কথা শুনলেও আমার বাবা আমাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন। ২০১৭’র শেষ দিক। পরীক্ষামূলক দুই বিঘা জমিতে সীডলেস লেবু বাগান করি। এটাই শুরু। বুঝতে পারি এখানে সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে না। শুরু করি মিশ্রভাবে কমলা, মাল্টা, শরিফা, পেয়ারার চাষ। যদিও আমার অভিজ্ঞতার অভাবে শুরুতে হোঁচট খেতে হয়েছে বেশ। তবে আমি থামিনি। অন্যান্য জেলায় যারা এসবের চাষ করেন তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করি। নেই ট্রেনিংও। যা এখনো চলমান। কেমন যেন একটা নেশার মতো। বাগানের একেকটা গাছ নিজের সন্তানের মতো লাগে।
আজিজুর বলেন, এখন আমার বাগানে অস্ট্রেলিয়ান বল সুন্দরী কুল, কাশ্মীরি আপেলকুল, দেশি নারকেলি কুলের চাষ হচ্ছে। দেশি- বিদেশি সবজি চাষ হচ্ছে। স্কোয়াশ, ক্যাপসিকামসহ ডায়াবেটিকস প্রতিরোধী ফল পেপিনো মেলন পরীক্ষামূলক চাষ শুরু করেছি। আস্তে আস্তে আমার প্রোজেক্টের পরিধি দাঁড়িয়েছে ৯ বিঘায়। এখন আমার প্রোজেক্টে দেশি-বিদেশি ফল ও সবজির চারা উৎপাদন হচ্ছে। আমার প্রোজেক্টে ৬ জন শ্রমিক মাসিক বেতনে কাজ করে। প্রয়োজন অনুসারে প্রতিদিন ১০ থেকে ২০ জন শ্রমিক দৈনিক মজুরিভিত্তিক কাজ করে। বর্তমানে আমি বাৎসরিক ৪ থেকে ৫ লক্ষ টাকা আয় করি।
গাইবান্ধা সংবাদদাতা: সবজি চাষ করে নিজ প্রচেষ্টায় শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের পুটিমারী গ্রামের কৃষক আমীর হোসেন। দৃঢ় বিশ্বাস আর একান্ত প্রচেষ্টায় মাত্র ৬% জমিতে সবজি চাষ শুরু করে কোটি টাকার ওপরে সম্পদ অর্জন করেছেন তিনি। এমন সফলতায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পদকসহ তিনি পেয়েছেন একাধিক পুরস্কার ও সম্মাননা। সবজির পাশাপাশি মাল্টা চাষে সফতলার পর এখন তিনি উচ্চ ফলনশীল পেয়ারা চাষেও দেখছেন সম্ভাবনার আলো।
জানা যায়, গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মুক্তিনগর ইউনিয়নের পুটিমারী গ্রামের কৃষক আমির হোসেন ৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ১৯৯৬ সালের শেষের দিকে পৈতৃক সূত্রে পাওয়া ৬ শতক জমিতে ১০০টি পেঁপের চারা লাগান আমির হোসেন। ওই জমিতেই সাথী ফসল হিসেবে চাষ করেন আদা। ছয় থেকে সাত মাসের চেষ্টায় পেঁপে ও আদা বিক্রি করে তার আয় হয় ১৫ হাজার টাকা। এভাবে শুরু হয় বিভিন্ন সবজি চাষ।
বছর খানেক চলার পর সবজি বিক্রির টাকা জমিয়ে এক বিঘা জমি বর্গা নেন। সেখানেও একই পদ্ধতিতে চাষাবাদ করেন তিনি। অক্লান্ত পরিশ্রম ও মেধা খাটিয়ে সফল চাষি হিসেবে জমি কিনতে শুরু করেন। এভাবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন তিনি। বর্তমানে প্রতি বছর উৎপাদন খরচ বাদে তার আয় হয় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা।
সফলতার কথা বর্ণনা করতে গিয়ে আমির হোসেন বলেন, বর্তমানে আমি দুই বিঘা জমিতে মাল্টা, এক বিঘা জমিতে কলা
, ১০ শতক জমিতে গেন্ডারী আখ, ৫ শতক জমিতে নবরতœ কচু, ১০ শতক জমিতে লেবু, ৪০ শতক জমিতে গোল আলু ও এক বিঘা জমিতে শিম চাষ করছি। এসব জমিতে সাথী ফসল হিসেবে হলুদ, আদা, কচু, টমেটো ও মিস্টি কুমড়া চাষ করেছি। একটি জমিতে একাধিক ফসলেই কৃষকরা দেখতে পারবে সফলতার মুখ।
গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক শামছুল আজাদ বলেন, আমি প্রতি মাসে একবার আমির ভাইয়ের বাড়িতে আসি কৃষি বিষয়ে বিভিন্ন পরামর্শ নিতে। আমির ভাইয়ের পরামর্শ নিয়ে আমি বিভিন্ন সবজির চাষ করে সফল হয়েছি। সাঘাটা উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের সবেক ইউপি সদস্য ফরমান আলী বলেন, আমি আমির ভাইয়ের বাগান দেখে অবাক হলাম। আমি কখনো কল্পনাও করতে পারিনি একজন কৃষক কখনো এত সফলতা অর্জন করেন। আমির ভাইয়ের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে আগামীতে কচু ও গেন্ডারী আখের চাষ করব।
গাইবান্ধা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, একটি জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন করে কৃষক আমির হোসেন সফলতা এনেছেন। পেয়েছেন একাধিক পুরস্কারও। এখন ফল চাষের দিকে ঝুঁকছেন। তিনি মালটা চাষে সফতলার পরে তিনি পেয়ারা চাষ শুরু করেছেন। তার ফসল উৎপাদনে পরামর্শ ও সহযোগিতা অব্যাহত আছে।
সিলেট সংবাদদাতা: লেখাপড়া করে শুধুই চাকরির পেছনে ছুটতে হবে বা চাকরিই করতে হবে এরকম কোনো কথা নেই। লেখাপড়া শেষ করে নিজের মেধা আর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে চাইলে অন্যভাবে ও সফল হওয়া যায়। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ শায়েস্তাগঞ্জের সফল একজন উদ্যোক্তা সোহাগ মিয়া।
সোহাগ মিয়া লেখাপড়া শেষ করে প্রায় চার বছর চাকুরির জন্য ঘোরাফেরা করেছেন, অবশেষে চাকরি না পেয়ে নিজের প্রচেষ্টাকে অন্যভাবে কাজে লাগিয়ে হয়েছেন একজন সফল চাষি।
জানা গেছে, ২০১৮ সাল থেকে তিনি কৃষি কাজে সময় দিচ্ছেন। নিজের জমিতেই গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন রকম শাক-সবজির বাগান। তার বাগানে উল্লেখযোগ্য সবজি হচ্ছে করলা, টমেটো ও শিম। সোহাগ মিয়া এ বছর ৬০ শতক জমিতে চাষ করেছেন শিম। এবার তার জমিতে শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে। সবকিছু ঠিক ঠাক থাকলে এবার শিম বিক্রি আসতে পারে দুই লাখ টাকার।
তার শিম ফলাতে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকার মত। প্রাকৃতিক পরিবেশে সম্পুর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে তিনি চাষ করেছেন শিম। তার জমিতে কোনোরকম কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি, ফলে একদম দেশীয় স্বাদে ক্রেতারা শিম কিনে খেতে পারবেন। সোহাগ মিয়ার জমিতে ৪-৫ জন শ্রমিক কাজ করে। তার কৃষি কাজে তাকে সহায়তা করে আসছেন তার মা ও বোন।
সোহাগের কৃষি ফার্মে কর্মরত শ্রমিক আনজব আলী বলেন, দৈনিক ৪শ টাকা মজুরিতে কাজ করেন এখানে। এই টাকা দিয়েই সংসার চালান তিনি। সৌদি আরব ১৮ বছর প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে আসেন একই গ্রামের ফরিদ মিয়া।
দেশে এসে কি করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না। মোরগের ফার্ম দিয়ে লোকসান হল অনেক টাকা। সোহাগের বিভিন্ন সবজির চাষ দেখে উৎসাহ পেলেন। নিজেও করলেন বিভিন্ন রকম সবজির চাষ। এতে করে এখন ফরিদ মিয়াও ভালো টাকা আয় করছেন।
সোহাগ মিয়া বলেন একাউন্টিং এ এমবিএ শেষ করে চার বছর চাকরির পিছনে ছুটেছি। কিন্তু চাকরি জুটলোনা ভাগ্যে। পরে পারিবারিক জমিতে টমেটো, করলা ও শিমের চাষ শুরু করি। সম্পূর্ণ অর্গানিক প্রদ্ধতিতে সবজির চাষ করি। যে কারণে উৎপাদন খরচ অনেক কম হয়। আর বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পারি। টমেটো আর করলা চাষ করার পরে এবার শিমের চাষ করেছি। শিম চাষে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা মতো। আল্লাহর রহমতে বাম্পার ফলন হয়েছে। আশা করছি ২ লাখ টাকার শিমের বিচি বিক্রি করতে পারবো। ৪ বছর চাকরির পিছনে না ঘুরে কৃষি কাজ করলে এতোদিনে অনেক টাকা আয় করতে পারতাম।
আমাকে দেখে গ্রামে অনেকেই এখন বিভিন্ন রকমের সবজি চাষ শুরু করেছেন। একই সাথে আমার ফার্মে কাজ করে ৪ থেকে ৫টি পরিবারের কর্মসংস্থান সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সরকারি সহযোগীতা পেলে তিনি আরও জমিতে নানান ধরনের সবজি চাষের উদ্যোগ নিবেন।
এ বিষয়ে শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জানায়, উচ্চ শিক্ষিত সোহাগ এখন অনেকেরই অনুপ্রেরণা। চাকরি পেতে ব্যর্থ হলেও তিনি কৃষিতে সফল। তার মতো শিক্ষিত বেকার যুবকরা যদি কৃষি কাজে এগিয়ে আসেন তাহলে দেশে কৃষিতে বিপ্লব হবে।
কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: ১৬টি নদ-নদী আর ৫ শতাধিক চর রয়েছে কুড়িগ্রাম জেলায়। এই চরের পতিত জমিতে সূর্যমুখী চাষ করে সাফল্য পাচ্ছে চাষিরা। বাড়ছে আবাদ। এতে করে একদিকে যেমন আয় ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, অন্যদিকে পতিত অনাবাদি জমিকে কাজে লাগিয়ে লাভবান হচ্ছে কৃষক।
কৃষি বিভাগের মতে, জেলার তিস্তা, ধরলা ও ব্রহ্মপুত্রের চরে সূর্যমুখী চাষ সম্প্রসারণ করে চরের কৃষকের ভাগ্য বদলের পাশাপাশি দেশের আমদানি নির্ভর ভোজ্য তেলের অনেকটাই যোগান দেয়া সম্ভব।
গত বছর কুড়িগ্রামে ২০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর আবাদ হলেও এবার আবাদ হয়েছে ২০০ হেক্টর জমিতে। প্রতি হেক্টরে ২ মে. টন সূর্যমুখী তেল বীজ উৎপাদন হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি তেল বীজের দাম ৮০ টাকা। প্রতি হেক্টর জমিতে ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার তেল বীজ বিক্রি হবে। সে হিসেবে এবার জেলায় কমপক্ষে ৩২ কোটি টাকার সূর্যমুখীর তেলবীজ বিক্রির আশা কৃষকদের। ভালো উৎপাদন ও দাম ছাড়াও সম্প্রসারণশীল বাজার দেখে খুশি সূর্যমুখী চাষিরা। তবে চাষ বাড়ানোর জন্য প্রয়োজন ঋণ সহায়তা।
এ ছাড়াও সূর্যমুখী থেকে পাখির খাবারের পাশাপাশি কোলস্টরেল মুক্ত তেল উৎপাদন করে ক্ষতিকর পামওয়েল ও সয়াবিন এর স্বাস্থ্য ঝুঁকি থেকে রেহাই পাবেন ভোক্তারা। আর সূর্যমুখীর গাছে চাহিদা মিটছে জ্বালানির। কর্মসংস্থান হয়েছে চরের বেকার দিন মজুরদের।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, নদী বহুল কুড়িগ্রাম জেলার ৪৬ হাজার চরভূমির বেশির ভাগে সূর্যমুখী চাষের অপার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। জেলার দারিদ্র্য বিমোচনে সূর্যমুখীচাষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মঞ্জুরুল হক জানান, রংপুর অঞ্চলে এবার ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে চারগুণ বেশি। বর্তমানে দেশে ভোজ্য তেলের দাম অনেক বেড়ে গেছে। ভালো মার্কেটিং করতে পারলে এবং উদ্যোক্তা তেল উৎপাদনে এগিয়ে আসলে সূর্যমুখী তেল দিয়েই দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা অনেকাংশে মেটানো সম্ভব বলে মনে করছেন কৃষি কর্মকর্তারা।
দিনাজপুর প্রতিনিধি: চলমান দুর্যোগেও থেমে নেই কৃষকের চাষাবাদ। এবার ধানের পাশাপাশি কৃষকরা গম চাষেও মনোযোগ দিয়েছেন। তাই গত বছরের চেয়ে চলতি মৌসুমে দিনাজপুরে গমের চাষও বেশি হয়েছে এবং বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
ধানের চেয়ে গম চাষে খরচ কম এবং ফসল উৎপাদন কাজে কৃষকের শ্রমও কম। প্রতি বিঘা জমিতে গম চাষে কৃষকের খরচ হয় ৬ থেকে সাড়ে ৬ হাজার টাকা। তাই অল্প শ্রমে স্বল্প ব্যয়ে কৃষকরা গম চাষে আগ্রহী হয়েছেন। এক বিঘা জমিতে ১৪ থেকে ১৮ মণ গম ঘরে তোলেন কৃষকরা। বাজারে গমের চাহিদার সাথে মূল্যও দিন দিন বাড়ছে।
দিনাজপুর জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের চেয়ে এ বছরে গমের চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছরে জেলায় ৬ হাজার হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। এবার তা বৃদ্ধি পেয়ে চলতি মৌসুমে ১৩টি উপজেলায় প্রায় ৬ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে গম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে চাষ হচ্ছে।
এবার সারাদেশেই ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ও উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের গম চাষে আগ্রহী করেছে কৃষককে। উদ্ভাবিত গমের নতুন জাতের গড় ফলন হবে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৪ থেকে ৫ টন। সারা দেশে এবার সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে গম চাষ হচ্ছে। ভাল দাম ও ভাল ফলন পাওয়ায় কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী এখন গম বীজ সরবরাহ করা গেলেই আগামী ২/১ বছরেই দেশে দ্বিগুণ পরিমাণ গম উৎপাদনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
উদ্ভাবিত নতুন জাতের বারি গম-৩৩, ডাব্লিউএমআরআই-২ ও ৩ সারাদেশে গম উৎপাদন বৃদ্ধিতে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। আগামী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে গমের ফলন পাওয়া যাবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইন্সটিটিউট দিনাজপুরের (বিডাব্লিউএমআরআই) মহাপরিচালক ড. মো. এছরাইল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, সারাদেশে এবার বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইন্সটিটিউট গমের ফলন ও উৎপাদন বাড়াতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধমে ২৩০৫ জন কৃষকের জমিতে প্রদর্শনী খামার করতে ৪৩ টন বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়াও গম উৎপাদনে বিএডিসিকে এবার ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ও উচ্চ ফলনশীল নতুন তিনটি জাতের ২৩ টনসহ মোট ৬০ টন প্রজনন বীজ সরবরাহ করা হয়েছে। আগের জাত ছাড়াও ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ও উচ্চ ফলনশীল উদ্ভাবিত নতুন জাতের বারি গম-৩৩, ডাব্লিউএমআরআই-২ ও ৩ সারাদেশে গম উৎপাদন বৃদ্ধিতে বীজ সরবরাহ করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, চলতি মৌসুমে সারা দেশে সাড়ে ৩ লাখ হেক্টর জমিতে এবার গম চাষ করা হচ্ছে। কৃষকের আগ্রহ সৃষ্টিসহ চাহিদা বাড়লেও সেই অনুযায়ী প্রজনন বীজ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। জায়গা সংকটের কারণে বিডাব্লিউএমআরআই-এর পক্ষে প্রজনন বীজ উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে না। তবে এ সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্যে দিনাজপুরের সেতাবগঞ্জ সুগারমিলের কান্তা ফার্মাসহ বিভিন্নস্থানের পরিত্যক্ত জমি লীজে দেওয়ার জন্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। পর্যাপ্ত জমি পেলে বিডাব্লিউএমআরআই প্রতিষ্ঠানটি সারাদেশের কৃষকের চাহিদা অনুযায়ী ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী ও উচ্চ ফলনশীল নতুন জাতের গম বীজ সরবরাহ করতে পারবে। আর এটা সম্ভব হলে ২/১বছরেই দেশে দ্বিগুণ পরিমাণ গম উৎপাদন সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।
নিউজ ডেস্ক : জেলার ৭ উপজেলায় ভুট্টার চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছর জেলায় ৪ হাজার ২২৮ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। তার আগের বছর ২০১৯-২০ সালে আবাদ হয়েছে ৩ হাজার ৪২০ হেক্টর জমিতে এবং ২০১৮-১৯ সালে ২ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে আবাদ হয় ভুট্টার। প্রতি বছরই এর আবাদ বাড়ছে কয়েকগুণ। এবছর হেক্টর প্রতি প্রতি ৮ মেট্রিকটন ভুট্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা র্নির্ধারণ করা হয়েছে। ভুট্টা চাষে পরিশ্রম কম, লাভজনক ও সরকারি প্রণোদনা প্রদাণের ফলে চাষিরা ভুট্টা চাষে আগ্রী হয়ে উঠছে। চলতি রবি মৌসুমে জেলায় ভুট্টার ব্যাপক আবাদ হওয়ায় হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুক’লে থাকলে এ জেলায় ভুট্টার বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষকরা জানান, সাধারণত কার্তীক অগ্রাহায়ণ মাসে মাঠের ধান তোলার পরই জমি পরিচর্যা করা হয়। পৌষের দিকে লাগানো হয় ভুট্টার বীজ। মাঘের শেষ পর্যন্ত আবাদ চলে। বৈশাখ মাসের শেষ দিকে ফসল ঘরে তোলা হয়। সাম্প্রতিক জেলায় ভুট্টার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর আবাদ বাড়ছে। বিভিন্ন ফাস্টফুড ও চাইনিজে ভুট্টার চাহিদা রয়েছে। এছাড়া প্রাণী খাদ্য হিসাবেও ভুট্টা ব্যবহার করা হয় ব্যাপক। ভুট্টা চাষে কম পরিশ্রম, বিগত বছর ভুট্টার ফলন ও লাভ ভালো হওয়ায় অনেক কৃষকই এবার ভুট্টা চাষ করছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-সহকারী উদ্বিদ সংরক্ষণ অফিসার মো: হুমায়ুন কবির জানান, জেলায় কৃষকদের ভুট্টা চাষে আগ্রহী গড়ে তুলতে সরকারিভাবে ২ হাজার কৃষকের মধ্যে উন্নত জাতের বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। প্রতি কৃষককে ২ কেজি উন্নত বীজ, ২০ কেজি ডিএপি ও ১০ কেজি এমওপি সার প্রদাণ করা হয়েছে। এছাড়া ভুট্টার উৎপাদন বৃদ্ধি করতে ৩০০ টি প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছে। শেষ পর্যন্ত আবহাওয়া অনুক’লে থাকলে জেলায় এবছর ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে বলে জানান এ কৃষি কর্মকর্তা।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, চলতি বছর ৪ হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আবাদ হয়েছে ৪ হাজার ২২৮ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১২৮ হেক্টর জমি বেশি। সাধারণত উচুঁ ও মাঝারী উচুঁ জমিতে ভুট্টার চাষ করা হয়। প্রতিবছর সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাও ভুট্টা চাষে কৃষকদের সহায়তা দিয়ে আসছে।
সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলী ইউনিয়নের কৃষক মো: লোকমান হোসেন ৬০ শতাংশ জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। নিজ জমিতে সরকারিভাবে বীজ ও সার পাওয়াতে এবার তার খরচ অনেকটাই কম হয়েছে। তিনি বলেন, ২ বছর হলো তিনি প্রথম ভুট্টার চাষ করেছেন। ভুট্টা চাষে লাভ বেশি হয় বলে তিনি এতে আকৃষ্ট হয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোন রোগ-বালাইর প্রভাব নেই তার ফসলে। আশা করছেন অধীক ফলনের মাধ্যমে লাভবান হবেন।
একই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের আব্দুল মালেক জানান, তিনি ২০ শতাংশ জমিতে ভুট্টার আবাদ করেছেন। সরকারি প্রণোদনা পাওয়াতে তিনি প্রচন্ড খুশি। মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিক পরামর্শ দিচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু মো: এনায়েতউল্লাহ বলেন, এ জেলায় এবছর সুপার সাইন ২৭৬০ ও কহিনুর জাতের চাষ বেশি করা হয়েছে। আর রোগের মধ্যে ফল আর্মি ওয়াম ও কাটুই পোকার আক্রমণ হয়। তাই কৃষকদের রোগ দমনে করণীয়, বীজ রোপণ, পরিচর্য়া ইত্যাদি বিষয়ের সঠিক নির্দেশনা ও সব ধরনের পরামর্শ সেবা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সিলেট সংবাদদাতা: হাঁসের ডিম বিক্রি করেই কোটিপতি সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের শনির হাওরপাড়ের এজাহারুন মিয়া। তার খামারের ডিম দেশের বাইরেও যাচ্ছে। একসময়ের দরিদ্র পরিবারের সন্তান এজাহারুন মিয়া এখন তাহিরপুরের বিত্তশালীদের একজন।
২২ বছর আগে (১৯৯৮-৯৯ সালে) হাওরপাড়ের দুতমা গ্রামের হাঁসের খামারি রজব আলীর খামারের হাঁস দেখাশোনার চাকরি করতেন তরুণ এজাহারুন মিয়া। ২ বছর ওখানে চাকরি করার পর আত্মীয়স্বজনের কাছ থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে ৩৫০টি হাঁস নিয়ে খামার করেছিলেন তিনি। কয়েক মাসের মধ্যেই অজানা রোগে একে একে তার সকল হাঁস মারা যায়। ঋণগ্রস্ত এজাহারুন স্ত্রীসহ এলাকা ছেড়ে ঢাকায় গিয়ে গার্মেন্টসে চাকরি নেন।
ওখানে প্রায় ১২ বছর দুজনে চাকরি করে কিছু টাকা সঞ্চয় করে হাঁসের খামার করার উদ্দেশ্যে নিয়ে আবার স্ত্রীকে নিয়ে গ্রামে ফিরেন এজাহারুন। এবার ২৫০টি হাঁস নিয়ে যাত্রা এই খামারির। এই পর্যায়ে তিনি অপেক্ষাকৃত বড় জাতের হাঁস কিনে ডিমের ব্যবসার দিকে নজর দেন।
গরমের মৌসুমে অপেক্ষাকৃত বড় জাতের যেসব হাঁসের বাচ্চা ফোটানো হয়। আশ্বিন মাসে সেগুলো ৫০০ থেকে ৫২০ টাকায় কিনে এনে লালন-পালন করেন। কার্তিক মাস থেকে এই হাঁসের পাড়া ডিম বিক্রি শুরু হয়। বৈশাখ মাস পর্যন্ত ডিম বিক্রি করে প্রথম বছরেই ভালো লাভ করেন তিনি।
বৈশাখ মাস পার হলে যখন ডিম পাড়া ছাড়ে এই হাঁসগুলো তখন একটু কম দামে ৪০০-৪৫০ টাকা করে বিক্রি করেন। তাতেও বহু টাকা লাভ হয় তার। এরপর আর ফিরে থাকাতে হয়নি এই খামারির। গত বছর ৩৬ লাখ টাকার ডিম বিক্রি করেছেন এই খামারি। এখন পর্যন্ত তার খামারে হাঁস আছে এক হাজার ৮৫০টি। এর মধ্যে প্রতিদিন ডিম পাড়ে এক হাজার ৬৫০টি।
তাহিরপুর গ্রামের বাসিন্দা আলমগীর হোসেন জানান, একসময় এজাহারুনের কিছুই ছিল না, আজ হাঁসের খামার করে তিনি তাহিরপুরের ১০ জনের একজন। তাকে সবাই হাঁস খামারি এজাহারুন বলেই চিনে। তাহিরপুর গ্রামের অন্য আরেক বাসিন্দা মিন্টু আহমেদ বলেন, আমিও এজাহারুনের মতো একটি হাঁসের খামার দিয়েছি কিন্তু খামারের খরচ বেশি সরকার যদি হাঁস খামারিদের ঋণ দিত তাহলে হয়তো এজাহারুনের মতো আমার জীবনও বদলে যেত।
তাহিরপুর গ্রামের আরেকজন বাসিন্দা মোস্তাক মিয়া জানান, এজাহারুন খুব দরিদ্র ছিল, মানুষের খামারে কর্মচারী থাকত। একসময় হাঁসের খামার দিয়ে লসে পড়েছিল এজাহারুন। পরে সে তার বউকে নিয়ে ঢাকা চাকরি করে আবার এলাকায় এসে হাঁসের খামার করে আজ সে বিত্তবান।
আজহার বলেন, আমার খামারের ডিম ভৈরব, ময়মনসিংহ, রাজধানী ঢাকায় এমনকি তার কাছ থেকে ডিম কিনে বিদেশেও রফতানি করেন ডিম রফতানিকারকরা। তার খামারে কাজ করেও অনেকে হাঁসের খামারি হয়েছে। কেউ কেউ এখনো কাজ করছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামান দাবি করেন, প্রাণিসম্পদ বিভাগ হাওরের এই জেলায় হাঁসের খামারিদের অধিক গুরুত্ব দিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ করে তুলছে। আর হাঁসের খামারিদের ঋণের বিষয়ে আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলব।
কুড়িগ্রাম সংবাদদাতা: কুড়িগ্রাম জেলাধীন রৌমারী উপজেলার বিদেশি ফল সাম্মাম ও রকমেলন চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছে শিক্ষিত বেকার যুবক কৃষি উদ্যোক্তা নজরুল ইসলাম।
শৌলমারী ইউনিয়নের চেংটাপাড়া গ্রাম সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, দুই জাতের ফল চাষ করেছে, থাইল্যান্ডের সাম্মাম ফল ও রকমেলন ফল, এ জাতীয় ফসলের জীবনকাল ৭৫ দিন, একর প্রতি ফলন হয় প্রায় আড়াই থেকে তিন টন। এ জাতের ফলগুলো পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও মিষ্টি হওয়ায় এলাকা ও সারাদেশে চাহিদা অনেক বেশি।
কৃষি উদ্যোক্তা নজরুল ইসলামের সফলতা ও স্বাবলম্বী হওয়া দেখতে প্রতিদিনই উপজেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে আসছে কৃষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর মানুষ। নজরুল ইসলাম স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে বর্তমান শৌলমারী ইউনিয়ন পরিষদের ডিজিটাল কেন্দ্রের পরিচালক হিসেবে কর্মরত থাকার পাশাপাশি কৃষি উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করেন।
কৃষি উদ্যোক্তা নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ও আমার বন্ধু মিজানুর রহমান সাম্মাম ও রকমেলন ফল চাষের পদ্ধতি দেখে পাশের জেলা জামালপুর থেকে বীজ সংগ্রহ করেছি। এক একর জমিতে সাম্মাম ফল ও এক একর জমিতে রকমেলন ফল চাষ করেছি। আমার খরচ হয়েছে দুই লাখ টাকা, দুই একর জমিতে ফলন হয়েছে প্রায় পাঁচ টন। বাজারে এক কেজি ফলের দাম ১৮০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রয় করা যায়। দুই একর জমির সাম্মাম ও রকমেলন ফল বিক্রয় করে আমার লাভ হয়েছে প্রায় ২ লাখ টাকা।
শৌলমারী ব্লকের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বাবুল বলেন, সাম্মাম ও রকমেলন একই প্রজাতির কিন্তু জাত ভিন্ন, এই ফল থাইল্যান্ড ও ভারতে মরু এলাকায় চাষাবাদ হয়। আমার ব্লকের দুই একর জমিতে এ ফল চাষাবাদ হয়েছে। রৌমারী অঞ্চলে এই জাতীয় ফল চাষাবাদের উপযোগী, আমরা কৃষকদের সাম্মাম ও রকমেলনের পাশাপাশি তরমুজ চাষে নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছি। বিদেশি ফল হওয়ায় এলাকায় পরিচিতি পেতে একটু সময় লাগবে। তবে এই ফল চাষাবাদ করে অল্প সময়ে কৃষক বেশি লাভবান হতে পারবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহরিয়ার হোসেন বলেন, মরু অঞ্চলের সাম্মাম ও রকমেলন ফল এই প্রথম রৌমারী উপজেলায় চাষ হয়েছে। সাম্মাম পুষ্টিকর, সুস্বাদু ও মিষ্টি জাতের ফল। এরমধ্যে এই ফল এলাকায় জনপ্রিয় হয়েছে। সাম্মাম ফলের বাইরের অংশ হলুদ, ভেতরের অংশ লাল, রকমেলন ফলের বাইরের অংশ সবুজ ভেতরের অংশ লাল। কৃষি উদ্যোক্তা নজরুল ইসলাম এই ফল চাষাবাদ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। কৃষি বিভাগ সবসময় তাদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে, এই ফল চাষাবাদ করার জন্য আমরা কৃষকদের পরামর্শ কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছি।