নিউজ ডেস্ক: পার্বত্য চট্টগ্রামের সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক বাড়ছে। কোথায় কখন কার লাশ পড়ে সেই ভয়-আতঙ্কই যেন তাড়া করে ফিরছে পাহাড়ের মানুষকে। সম্প্রতি পাহাড়ে আবারও বেড়েছে খুন-গুম-হত্যা। প্রতিনিয়ত রক্তে রঞ্জিত হচ্ছে সবুজ পাহাড়। সর্বশেষ গত বুধবার ২৪ ফেব্রুয়ারি রাঙামাটির বাঘাইছড়িতে সরকারি অফিসে ঢুকে সমর বিজয়া চাকমা (৩৮) নামে এক ইউপি মেম্বারকে গুলি করে হত্যা করেছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। প্রতিপক্ষ দলের হওয়ায় জেএসএস (সন্তু) গ্রুপের সদস্যরা গুলি করে তাকে হত্যা করেছে বলে স্থানীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতীয় সশস্ত্র গ্রুপগুলো প্রকাশ্যে একের পর এক হত্যাকান্ড করে যাচ্ছে। এ রকম প্রকাশ্যে হত্যাকান্ড সম্পূর্ণ পরিকল্পিত যা শুধুই কোন একজনকে হত্যা করা বা থামিয়ে দেয়ার উদ্দেশ্যে নয়। এই রকম একেকটি প্রকাশ্যে হত্যা অর্থ এলাকার সকল মানুষের মাঝে আতঙ্ক তৈরি করে আধিপত্য অর্জনই এদের উদ্দেশ্য। তারা সাধারণ মানুষকে ভীতির মাঝে রেখে পার্বত্যাঞ্চলে একক আধিপত্য বিস্তার করতে চায়, যার মূল উদ্দেশ্য হলো তাদের মনের সুপ্ত বাসনা স্বাধীন জুম্মল্যান্ড এর বাস্তবায়ন। অবিলম্বে এ সব অস্ত্রধারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনা উচিত বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন।
মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীক গতকাল জানান, তিন কারণে পাহাড়ে হত্যাসহ অন্যান্য অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। মিয়ানমারের আরাকান ও বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা সমস্যা, ভারতের ত্রিপুরার রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং ঢাকার বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সম্পর্ক রয়েছে। প্রায় ৩২ বছর যাবত পার্বত্য চট্টগ্রামে অনির্বাচিত সরকার চলছে। পাহাড়ে অশান্তি সৃষ্টির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করা সম্ভব হলে উচ্চ বিলাষি সন্ত্রাসীরা স্বর্গরাজ্য তৈরি করতে চায়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ৩ মে নানিয়ারচর উপজেলা চেয়ারম্যান শক্তিমান চাকমাকে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় প্রাঙ্গণে খুন করে পালিয়েছিল জেএসএস (সন্তু) দলের সন্ত্রাসীরা। এছাড়াও ২২ ফেব্রুয়ারি বান্দরবান সদরস্থ রাজভিলা ইউনিয়নের জামছড়ি বাজারে জেএসএস (সন্তু) দলের একদল সন্ত্রাসী রাজভিলা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সভাপতি বাচানু মারমাকে গুলি করে প্রকাশ্যে হত্যা করে এবং গত ১ এপ্রিল কাপ্তাই উপজেলার ৩নং চিৎমরম ইউনিয়নের ওয়ার্ড যুবলীগ এর ভাইস চেয়ারম্যান উসুইপ্রু মারমাকে জেএসএস (সন্তু) দলের সন্ত্রাসীরা বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে গুলি করে হত্যা করে।
চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন জানান, পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলার (বান্দরবার, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি) অধিকাংশ এলাকাই খুবই দুর্গম। যোগাযোগ ব্যবস্থা অত্যন্ত কঠিন। এ কারণে হত্যাসহ কোনো অপরাধ সংঘটিত হলে অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা কঠিন হয়ে পড়ে। তবে হত্যা, চাঁদাবাজি ও অন্যান্য অপরাধের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
মানবাধিকার ও পাহাড়ের বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা বলছেন, পাহাড় অশান্ত হওয়ার প্রধান কারণ হলো কতৃত্ববাদ। পাহাড়ের নিয়ন্ত্রণ নিতে মরিয়া এখন চারটি গ্রæপ। আর এদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে বিভিন্ন মহলের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়। এই চারটি দলের মধ্যে ক্ষমতার দ্ব›দ্ব চলতেই থাকে। যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। পাহাড়ে আঞ্চলিক চারটি দল থাকলেও তারা দুইভাগে বিভক্ত। চুক্তির পক্ষের সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) এবং চুক্তিবিরোধী প্রসীত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) এখন এক হয়ে কাজ করছে। সুধাসিন্ধু খীসার নেতৃত্বাধীন জেএসএস (এমএন লারমা) এবং শ্যামল কান্তি চাকমার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফকে (গণতান্ত্রিক) এক হয়ে কাজ করছে বলে মনে করেন তারা।
দীর্ঘদিন ধরে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে কাজ করছেন একটি সংস্থার এমন একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, শান্তিচুক্তির পর চার সংগঠন সৃষ্টির মাধ্যমে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিনিয়ত তিন পার্বত্য জেলায় ঘটছে খুনের ঘটনা। মূলত আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে এসব ঘটনা ঘটে থাকে। যে এলাকা যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, সে এলাকার চাঁদাও যাবে সেই সংগঠনের তহবিলে। এতে সংগঠনকে আরও বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে চালানো সম্ভব হয়। এজন্য চাঁদার স্পট ঠিক রাখতেই সেসব স্থানে চলে খুনোখুনির ঘটনা।
পার্বত্য চট্টগ্রামের একটি দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, শান্তিচুক্তির পর পাহাড়ে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করলেও এক বছরের মাথায় চুক্তির বিরোধিতা করে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে গঠিত হয় ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ)। এরপরই ফের শুরু হয় পাহাড়ে রক্তের খেলা। ২০০৭ সালে জনসংহতি সমিতি থেকে বেরিয়ে রূপায়ণ দেওয়ান-সুধাসিন্ধু খীসাদের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এম এন লারমা)। এতদিন এ দুই সংগঠন অনেকটা এক হয়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গেলেও পরে আত্মপ্রকাশ করে পাহাড়ের চতুর্থ আঞ্চলিক সশস্ত্র দল ইউপিডিএফ (গণতান্ত্রিক)। এই চার সংগঠনের ক্ষমতা ও আধিপত্যের দ্ব›েদ্বর কারণে আবারও অশান্ত হয়ে উঠেছে পাহাড়। মূলত পাহাড়ের আঞ্চলিক দলগুলোর মধ্যে আধিপত্য ও চাঁদাবাজির এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েই বৈরিতা।
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি: একসময় পাহাড়ের পর পাহাড়ে শোভা পেত জুম চাষ। জুম চাষে ব্যস্ত সময় কাটাতো পাহাড়ের জুমিয়ারা। সময়ের ব্যবধানে পাহাড়ি টিলা ভূমিতে জুম চাষ নিয়ে ব্যস্ত থাকা সেই জুমিয়ারা আগাম আনারস চাষে সাফল্যের স্বপ্ন দেখছে।
আর জুমিয়াদের হাত ধরেই ‘পাহাড়ের আগাম আনারসের চাহিদা বাড়েছে সমতলে’। স্থানীয় ও বিভিন্ন জেলা থেকে আসা পাইকারদের হাত ধরেই পাহাড়ের আগাম আনারস জায়গা করে নিয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
গত কয়েক বছর ধরে পাহাড়ি জেলাগুলোতে ‘হানিকুইন’ জাতের আনারসের চাষ হচ্ছে। পাহাড়ি টিলা ভূমিতে চাষ করা আনারস রসালো ও সুমিষ্ট হওয়ায় এর চাহিদাও অনেক বেশি। মৌসুমে আনারস চাষে যেখানে চাষিদের লোকসান গুণতে হতো সেখানে মৌসুমের বাইরে ‘হানিকুইন’ জাতের আগাম আনারস চাষে বাড়তি লাভের মুখ দেখছে চাষিরা। সম্প্রতি খাগড়াছড়ির মহালছড়ির আগাম আনরাস চাষিদের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
মহালছড়ির মধ্য আদাম এলাকায় পাহাড়ি টিলা ভূমিতে আগাম ১৬ হাজার আনারসের চারা রোপণ করেছেন চাষি সুলক্ষণ চাকমা। তার লাগানো ১৬ হাজার চারার মধ্যে প্রায় ১৪ হাজার গাছে আগাম ফলন এসেছে। আগাম আনারস রসালো এবং সুস্বাদু হওয়ায় এর চাহিদা অনেক বেশি।
মৌসুমী আনারস চাষের চেয়ে আগাম আনারস চাষে খরচ বেশি হলেও লোকসানের ভয় থাকে না। আনারসের বাজার দর বেশি থাকায় চাষিরা লাভের মুখও দেখছে। বলেছেন পাহাড়ি কৃষক সুলক্ষণ চাকমা।
তিনি জানান, সমতলের বিভিন্ন জেলায় আগাম আনারসের চাহিদা থাকায় বাজারজাত নিয়েও কোনো দুশ্চিন্তা করতে হয় না। স্থানীয় বা বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ব্যবসায়ীরা বাগান থেকেই কিনে নিচ্ছে পাহাড়ের আনারস। এবছর তিনি আকার অনুযায়ী প্রতি পিস আনারস ১৪ থেকে ২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন বলেও জানান।
দাম ভালো পাওয়ায় অনেকেই আগাম আনারস চাষে ঝুঁকছেন জানিয়ে আনারস চাষি রিপন চাকমা বলেন, আগাম ফল আসলে ভালো লাভে বিক্রি করা যায়। সমতলের ভোক্তাদের কাছে পাহাড়ের আগাম আনারসের চাহিদাও ব্যাপক। পাইকররা বাগান থেকে আনারস সংগ্রহ করেন বলে চাষিদের ভোগান্তি অনেকাংশে কম।
মহালছড়ির বিভিন্ন বাগান থেকে আগাম আনারস সংগ্রহ করে নোয়াখালীর বিভিন্ন হাট-বাজারে বিক্রি করেন নোয়াখালীর পাইকারী ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, সরাসরি চাষিদের কাছ থেকে সংগ্রহ করার কারণে কম দামে কিনে নিতে পারি। মৌসুমে প্রতি পিস আনারস ৪ থেকে ৫ টাকায় কিনলেও এখন ১৪ থেকে ২০ টাকায় কিনতে হচ্ছে।
চট্টগ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী মো: আব্দুল জব্বার বলেন, রসালো ও সুস্বাদু হওয়ায় বরাবরই সমতলের বিভিন্ন জেলায় পাহাড়ের আনারসের চাহিদা বেশি। তবে আগাম আনারস হওয়ায় মৌসুমের তুলনায় দাম একটু বেশি হলেও চাহিদা অনেক বেশি। অসময়ে আনারস বাজারে পাওয়ায় দাম নিয়ে মানুষ কোনো চিন্তা করে না। সমতলের মানুষ দামের চেয়ে স্বাদটাকেই বেশি গ্রহণ করে।
আগাম আনারসের চাষ হওয়ায় শ্রমিকরা সারা বছরই আনারস বাগানে কাজ করে জানিয়ে শ্রমিক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আগাম আনারসের চাষ বাড়ার সাথে সাথে কর্মসংস্থাননেরও সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ফলে আমাদেরকে কাজ নিয়ে ভাবতে হয় না। কাজ করে ভালোই চলছে আমাদের সংসার। এতে আমরা অনেক খুশি।
পাহাড়ে উৎপাদিত আগাম আনারস স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে সমতলের বিভিন্ন জেলায় বাজারজাত হচ্ছে জানিয়ে মহালছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আব্দুল জব্বার জানান, ফলে স্থানীয় কৃষকরা আগাম আনারস চাষে ঝুঁকছেন। আগাম আনারস চাষ পাহাড়ে অর্থনীতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করেছে বলেও মন্তব্য করেন এ কর্মকর্তা।
নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী ৩০ মার্চ দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। শনিবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মন্ত্রিপরিষদ কক্ষে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে তিনি এ সিদ্ধান্ত জানান।
বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এছাড়াও কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে অংশ নেয়া এক কর্মকর্তা জানান, শিক্ষকদের করোনা টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। টিকা কার্যক্রম সম্পন্ন হতে আরও কিছু সময় লাগতে পারে। যে কারণে ছুটি বাড়িয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
এছাড়া বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল মান্নান, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো. কামাল হোসেন, পুলিশ মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ (আইজিপি), স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম প্রমুখ।
এর আগে আরও তিনমাস পর আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দেয়ার কথা জানিয়েছে সরকার। এর আগে ১৭ মে থেকে খুলবে আবাসিক হল। তার আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ভ্যাকসিন দেয়া হবে। দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদেরও ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকে প্রায় চার লাখ ছয় হাজার ৪৬৯ জন শিক্ষক রয়েছে। আর কর্মচারীর সংখ্যা এক লাখ ৬২ হাজার ৮৬১ জন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক প্রায় ১৫ হাজার ৫২৪ জন।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিকে শিক্ষক আছেন ছয় লাখ ৮৫ হাজার ৪০০ জন। এরমধ্যে প্রাথমিকসহ অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা ইতোমধ্যে টিকা নেয়া শুরু করেছেন।
নিউজ ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রাইমারি থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষা পর্যন্ত সকল স্কুল-কলেজের সব শিক্ষক-কর্মচারী এবং যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে বা হোস্টেলে থাকবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিয়ম অনুযায়ী যে বয়সীদের টিকা দেওয়া যায়, তাদের সবাইকে টিকার আওতার আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এটা আমরা দেব, কারণ আমরা আমাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুব দ্রুত খুলতে চাই। পড়াশোনার পরিবেশটা ফিরিয়ে আনতে চাই।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশের জাতিসংঘের চূড়ান্ত সুপারিশ লাভ করা উপলক্ষে আজ শনিবার বিকেলে প্রেস কনফারেন্সে (ভার্চ্যুয়ালি) লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া- এটা তো আমার কর্তব্য, আমি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শুধু না, আমি জাতির পিতার কন্যা, এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড় কথা। সেই হিসেবে আমি মনে করি, আমার এটা কর্তব্য, আমরা করে যাচ্ছি।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষের গড় আয়ু ২০০৯-১০ বছরের ৬৯.৬১ বছর থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৯-২০ সালে দাঁড়িয়েছে ৭২.৬ বছর। ২০০৯-১০ বছরের তুলনায় ৫ বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর হার অর্ধেক কমে দাঁড়িয়েছে প্রতি হাজারে ২৮। মাতৃমৃত্যুর হার কমে দাঁড়িয়েছে লাখে ১৬৫ জনে, যা ২০০৯-১০-এ ছিল ২৮০ জন।
মুজিববর্ষে সবার জন্য ঘর দেওয়ার কর্মসূচির কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সকল গৃহহীনদের ঘর প্রদান কর্মসূচির আওতায় ৮ লাখ ৯২ হাজার গৃহহীনকে ঘর দেওয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭০ হাজার ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। আরও ৫০ হাজার গৃহ নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত মোট ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৩৪৬ পরিবারকে বাসস্থানের ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।
নারীর ক্ষমতায়নের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের নারীরা আজ স্বাবলম্বী। জেন্ডার গ্যাপ ইনডেক্সে ১৫৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৫০তম এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে ৭ম।
গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ২৮ লাখ ৫০ হাজার ৯৪০ জনকে প্রথম ডোজ করোনা ভাইরাসের টিকা দেওযা হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আন্তর্জাতিক ডেস্ক: আন্দামান সাগর থেকে ভারতীয় কোস্ট গার্ড যে ৮১ জন রোহিঙ্গাকে উদ্ধার করেছে, তাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ বাধ্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেছেন।
শুক্রবার ভারতীয় কর্মকর্তারা জানান, তারা আন্দামান সাগর থেকে একটি রোহিঙ্গা নৌকা উদ্ধার করেছেন। উদ্ধারের সময় নৌকায় ৮১ জন জীবিত ছিলেন ও আটজন ইতোমধ্যে মারা গেছেন। নৌকাটি বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর জন্য ভারত সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা করছে বলে জানান তারা।
তবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন রয়টার্সকে বলেন, বাংলাদেশ আশা করে, উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গা শরনার্থীদের ভারত অথবা মিয়ানমার গ্রহণ করবে।
তিনি বলেন, ‘তারা (উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গা) বাংলাদেশি নাগরিক নয়। তারা মিয়ানমারের নাগরিক। বাংলাদেশের সামুদ্রিক সীমানার ১ হাজার ৭শ কিলোমিটার দূরে তাদের পাওয়া গেছে। আর সে কারণেই, তাদেরকে নেয়ার জন্য আমাদের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বিশ্বের সকল রোহিঙ্গা বা নৌকায় ভেসে থাকা লোকজনদের গ্রহণ ও পুনর্বাসন করতে কি বাংলাদেশকে বৈশ্বিক চুক্তি করানো হয়েছে ও দায়িত্ব দেয়া হয়েছে? না, একেবারেই না।’
তিনি বলেন, জাতিসংঘের শরনার্থী বিষয়ক হাই কমিশনের (ইউএনএইচসিআর) উচিত উদ্ধারকৃত রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেয়া কারণ ওই নৌকার ৪৭ জনের কাছে বাংলাদেশে অবস্থিত ইউএনএইচসিআর কার্যালয়ের পরিচয়পত্র ছিল।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যদি শরনার্থীরা ইউএনএইচসিআরের পরিচয়পত্রধারী হয়, তাহলে কেন তারা (ইউএনএইচসিআর) পাচারকারীদের দ্বারা নিজেদের পরিচয়পত্রধারীদের সাগরে ভাসার অনুমতি দিয়েছে যা তাদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দিয়েছে?
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এ বক্তব্যের ব্যাপারে ভারতীয় কর্মকর্তাদের কাছ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া ইউএনএইচসিআরের কর্মকর্তাদেরও মন্তব্যের জন্য তাৎক্ষনিকভাবে পাওয়া যায়নি বলে জানায় রয়টার্স।
মালয়েশিয়া যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত ১১ ফেব্রুয়ারি রোহিঙ্গাদের নিয়ে নৌকাটি বাংলাদেশের কক্সবাজার থেকে ছেড়ে যায়। নৌকাটিতে ৫৬ জন নারী, আটজন কিশোরী, পাঁচজন কিশোর ও ২১ জন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ ছিলেন। সাগরে যাত্রা শুরুর চার দিন পর নৌকাটির ইঞ্জিন নষ্ট হয়ে যায়। এরপর সাহায্যের অনুরোধ পেয়ে ভারতীয় কোস্ট গার্ডের জাহাজ তাদের উদ্ধার করে।
শরনার্থীদের রক্ষা ও রাষ্ট্রের দায়িত্ব নিশ্চিতে আয়োজিত ১৯৫১ সালের জেনেভা কনভেনশনে ভারত স্বাক্ষর করেনি। দেশটিতে শরনার্থীদের রক্ষায় নিজস্ব কোনো আইনও নেই। বর্তমানে ভারতে দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরনার্থী রয়েছে।
বাংলাদেশে বর্তমানে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরনার্থী রয়েছে। এদের মধ্যে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে ২০১৭ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের পর। মানব পাচারকারীরা প্রায়শই মালয়েশিয়ায় কাজ দেয়ার কথা বলে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের প্রলোভন দেখায়।
নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি বছরেই বাংলাদেশে ৫-জি নেটওয়ার্ক সেবা চালু করা হবে বলে জানিয়েছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশের (আইইবি) শহীদ প্রকৌশলী ভবনের কাউন্সিল হলে এক সেমিনারে অনলাইনে যুুক্ত হয়ে এ তথ্য জানান তিনি।
‘চতুর্থ শিল্প বিপ্লব: বাংলাদেশ প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে আইইবি।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী বলেন, আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচি কেবল চতুর্থ শিল্প বিপ্লবেই সীমিত নয়। ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির মাঝে স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে যে রূপান্তর ঘটানো দরকার তা নিহিত রয়েছে।
তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালে আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন্স ইউনিয়ন ও ইউপিইউ’র সদস্যপদ অর্জন এবং ’৭৫ এর ১৪ জুন বেতবুনিয়ায় উপগ্রহ ভূকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে জাতির পিতা ডিজিটালাইজেশনের বীজ বপন করে গেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সালে কম্পিউটারের ওপর থেকে শুল্ক ও ভ্যাট প্রত্যাহার, অনলাইন ইন্টারনেট চালু করে সাধারণের নাগালে মোবাইল পৌঁছে দিতে মোবাইল ফোনের মনোপলি ব্যবসা বন্ধ করে চারটি মোবাইল কোম্পানিকে লাইসেন্স প্রদান এবং ভিস্যাটের মাধ্যমে ইন্টারনেট চালুসহ যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে ডিজিটালাইজেশনের রোপিত বীজটিকে চারা গাছে রূপান্তর করেন। ২০০৯ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত তারই ঘোষিত ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচির সফল বাস্তবায়নের ধারাবাহিকতায় তা আজ বিরাট মহিরূহে রূপান্তর লাভ করেছে। এখন শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত প্রযুক্তি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করতে হবে।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, কোভিডকালে ডিজিটাল বাংলাদেশের সফলতার ফলে দেশে শতকরা ৭০ ভাগ মানুষ ঘরে বসে টেলিমেডিসিন চিকিৎসা নিয়েছে। গ্রামের প্রথম শ্রেণির শিশুটিও ইন্টারনেটের মাধ্যমে তার শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। ২০২২ সালের মধ্যে দেশের প্রতিটি ডাকঘরকে ডিজিটাল ডাকঘরে রূপান্তর করার কাজ চলছে।
বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। আমরা ইতোমধ্যে সেই প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছি। আগামী ২৬ মার্চ ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আমরা সক্ষম হবো। তিনি বিদ্যুতের সাবমেরিন ক্যাবলের সঙ্গে ডিজিটাল সংযোগের তার নেওয়ার ব্যবস্থার কথাও জানান।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তিকে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য অপরিহার্য উল্লেখ করে বলেন, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য দক্ষ জনসম্পদ জরুরি। এই লক্ষ্যে ৩৯টি হাইটেক পার্ক নির্মাণসহ যুগান্তকারী বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
আইইবির প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. নূরুল হুদার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং আইইবির সাবেক প্রেসিডেন্ট প্রকৌশলী মো. আবদুস সবুর, আইইবির সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু), আইইবির ভাইস প্রেসিডেন্ট (এইচআরডি) প্রকৌশলী মো. নূরুজ্জামান বক্তব্য রাখেন।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ মাহফুজুল ইসলাম।
নিজস্ব প্রতিবেদক: স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, চট্টগ্রাম বন্দরের নিয়ে বাংলাদেশ স্বপ্ন দেখছে। সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হচ্ছে।
চট্টগ্রামের উন্নয়নে সরকার এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অত্যন্ত আন্তরিক বলে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘সবার অংশগ্রহণের মাধ্যমেই উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী প্রকল্পে অর্থবরাদ্দ দিতে রাজি, যদি সেই অর্থ যথাযথভাবে কাজে লাগে। সবার অংশগ্রহণ ও সহযোগিতার মাধ্যমে যথাযথভাবে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হলে আমরা টাকা দিতে রাজি।’
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম রেডিসন ব্লু বে ভিউয়ের মেজবান হলে চট্টগ্রামে ওয়াসার পতেঙ্গা বুষ্টিং পাম্প স্টেশনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘চট্টগ্রাম বন্দর আমাদের গর্বের জায়গা। কিন্তু এলোমেলোভাবে বন্দরের জায়গা লিজ দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে নদীর পাশে কারখানা গড়ে উঠছে।’
এ ধরনের কাজকে কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘এসব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে হবে।’
চট্টগ্রাম ওয়াসার বোর্ড চেয়ারম্যান ড. জাহাঙ্গীর আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন— চট্টগ্রাম সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী, শামসুল হক চৌধুরী এমপি, মোছলেম উদ্দিন আহাম্মদ এমপি, নজরুল ইসলাম এমপি, আবু রেজা মোহাম্মদ নদভী এমপি, চট্টগ্রাম নগর মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হাসিনা মহিউদ্দিন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে ওয়াসা প্রকল্পের বিস্তারিত উপস্থাপন করেন চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ ফজলুল্লাহ।
ওয়াসা চেয়ারম্যান জানান, চট্টগ্রাম ওয়াসার বাস্তবায়নাধীন চট্টগ্রাম পানি সরবরাহ উন্নয়ন ও স্যানিটেশন প্রকল্পের আওতায় পতেঙ্গা বুষ্টিং পাম্প স্টেশনটি নির্মিত হয়েছে। এই প্রকল্পের ফলে পানি ও স্যানিটেশন সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে চট্টগ্রাম নগরীর বিপুল জনগোষ্ঠী।
নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের লেবুখালী আঞ্চলিক উদ্যান তত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র উদ্ভাবিত নিজস্ব দুটি জাতের তরমুজের অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় বীজ বোর্ড। পটুয়াখালীর দুমকী উপজেলার লেবুখালী আঞ্চলিক কৃষি উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ জাত দুটি উদ্ভাবন করে। সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ের জাতীয় বীজ বোর্ডের সচিব বলাই কৃষ্ণ হাজরা এ জাত দুটির নিবন্ধন প্রত্যয়নপত্র প্রদান করেছেন। এর ফলে বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ জাত দুটি মুক্তায়িত হয়েছে এবং এতে করে সরকারের বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে আর বাংলাদেশের কৃষক পর্যায়ে এক নতুন মাত্রা যোগ হলো।
আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, হাইব্রিড জাতের এই তরমুজ দেশের সব অঞ্চলে চাষ করা যাবে। বারি তরমুজ-১ ও বারি তরমুজ-২ একটির ভিতরে (মাংসল অংশ) হলুদ অপরটির ভিতরে (মাংসল অংশ) লাল রঙের। এ জাতের প্রতিটি গাছে দুই থেকে তিনটি ফলন হবে, যা গড়ে চার থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। গাছ লাগানোর ৯০ থেকে ১০০ দিন সময় প্রয়োজন হয় ফলনে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণ উপকূলে কৃষকের লাভজনক এই ফলটি চাষে প্রতিবছর প্রচুর অর্থ ব্যয় হয় তরমুজের বীজ সংগ্রহ করতে। প্রতিবছর তরমুজের বীজ বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। আর এ বাবদ বছরে প্রায় আড়াইশ কোটি টাকা ব্যয় হয়। আর এসব বীজ হাইব্রিড হওয়ায় উৎপাদিত ফল থেকে বীজ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না। এ ছাড়া প্রতিবছর আলাদা আলাদা জাতের বীজ আমদানি করার ফলে এর অঙ্কুরোদ্গম, সফল পরিচর্যা করতে কৃষকদের বিভিন্ন সময় ক্ষতির মুখে পড়তে হয়। তাই দেশের এলাকা সহিষ্ণু তরমুজের নিজস্ব জাত উদ্ভাবনে সফল হয়েছেন পটুয়াখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।
লেবুখালী আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষনা কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বারি তরমুজ বিজ্ঞানী রেজাউল করিম জানান, জাত দুটি ওপেন পলিনেটেড ভ্যারাইটি (পরাগায়ন) হওয়ায় কৃষকরা এ থেকে বীজ সংগ্রহ করতে পারবেন এবং অঙ্কুরদ্গম হবে। ফলে কৃষককে প্রতিবছর বীজ ক্রয় করতে হবে না। অনেক সময় আমদানি করা বীজ অঙ্কুরদ্গম হয় না। তখন কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন হন। পাশাপাশি শুধু গ্রীষ্মকালেই নয় এই জাত দুটি সারা বছর আবাদ করা যাবে। কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বারি তরমুজ বিজ্ঞানী ড. মো. ইদ্রিস আলী হাওলাদার জানান, জাত দুটি অনুমোদন পাওয়ায় তরমুজের বীজ আর বিদেশ থেকে আমদানি করতে হবে না। তাই দেশের টাকা দেশেই থাকবে। অপর দিকে তরমুজটি যেমন খেতে মিষ্টি, তেমনি এর সাইজও অনেকটা ফ্যামিলি সাইজের। ফলে ক্রেতারাও এটি কিনতে আকৃষ্ট হবেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক: যুবকদের কর্মসংস্থান ও দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য ২০৯ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। এটি ব্যাপক প্রযুক্তি নির্ভর সমম্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা (৩য় পর্যায়) প্রকল্প। বাস্তবায়ন করবে যুব উন্নয়ন অধদিপ্তর।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির মাধ্যমে লাখো যুবকের কাজের সুযোগ তৈরি করা হবে।
যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের পরিচালক (যুব উন্নয়ন ও ঋণ শাখা) মাসুদা আকন্দ বলেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে যুবকদের কর্মসংস্থান, দারিদ্র্য বিমোচন ও পরিবেশ উন্নয়ন করা হবে। খামারের পরিবেশ ঠিক রাখার প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। জ্বালানি ও জৈব সার তৈরি হবে। এর মাধ্যমে লাখো যুবকের কর্ম পরিবেশ তৈরি হবে। পরিবেশ দূষণমুক্ত রেখে যুবকদের কাজের সুযোগ হবে।
যুবসমাজকে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে যুব সম্পদে রূপান্তর করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিতকরণ ও উৎপাদনশীল কর্মসংস্থানের এবং আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে। প্রকল্পটি ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সঙ্গে মিল রয়েছে।
গ্রামীণ যুবকদের র্কমসংস্থানরে সুযোগ সৃষ্টি; সরকারের নির্বাচনী ইশতহোর আমার গ্রাম -আমার শহর’ অনুযায়ী আধুনকি নাগরিক সুবধিা সম্প্রসারণরে লক্ষ্যে নবায়নযাগ্যে জ্বালানি ব্যবহাররে সম্ভাবনা উন্মাচেন করা হবে। নারীদের জন্য ধোঁয়াহীন, আরামদায়ক, স্বাস্থ্যসম্মত এবং সময় সাশ্রয়ী রান্নার সুযোগ সৃষ্টি করা, যাতে তারা এ অতরিক্তি সময় অন্যান্য উন্নয়ন কর্মকা-ে ব্যয় করতে পারে; রান্নার জন্য জ্বালানি কাঠের ব্যবহার কমিয়ে আনা এবং বন উজাড় রোধ করে দেশের উন্নয়ন করা; জৈব বর্জ্য চক্রায়নের মাধ্যমে কৃষি জমিতে ব্যবহারের জন্য জৈব সার উৎপাদন; বায়োগ্যাস প্লান্টে পচনশীল বর্জ্যের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে প্রকল্প এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশন ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং দূষণমুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে সহায়তা। খামারে বায়াগ্যোস পদ্ধতি প্রর্বতন সুবধিা সর্ম্পকে যুবকদের সচতেন করাও প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য।
সমন্বিত খামারে বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে বিকল্প জ্বালানি হিসাবে উৎপাদিত বায়োগ্যাসে আরামদায়ক, স্বাস্থ্যসম্মত এবং সময় সাশ্রয়ী রান্নার সুযোগ সৃষ্টি করা, বিদ্যুৎ উৎপাদন করা, গবাদি পশু ও মুরগির খামারে দুর্গন্ধ ও দূষণমুক্ত স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সৃষ্টি করা ও উন্নতমানের জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব।
জাপান সরকারের অর্থায়নে প্রথম পর্যায়ে ২০ কোটি টাকা ব্যয়ে জুলাই ২০০৬ থেকে ২০১১ মেয়াদে ১০টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হয়। এই পর্যায়ে ৪ হাজার ৩৮টি বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হয়। এর ফলে ৫ হাজার ৯৭০ জন যুবক উপকারভোগী।
সরকারের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) ইমপ্যাক্ট (ফেজ-১) প্রকল্প মূল্যায়ন করে। এর ভিত্তিতে সম্পূর্ণ জিওবি অর্থায়নে মোট ৭৫ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে প্রকল্প নেওয়া হয়। জানুয়ারি ২০১৪ থেকে ২০১৯ মেয়াদে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ব্যাপক প্রযুক্তি নির্ভর সমন্বিত সম্পদ ব্যবস্থাপনা (২য় পর্যায়)’ শিরোনামে প্রকল্পের ২য় পর্যায় সফলভাবে দেশের ৬১টি জেলার ৬৬টি উপজেলায় বাস্তবায়ন করা হয়।
উল্লেখ্য, প্রকল্পের ২য় ফেজে মোট ৩১ হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় স্থানীয় চাহিদার ভিত্তিতে প্রকল্পটি সম্প্রসারণের জন্য প্রকল্পের ৩য় পর্যায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমসমূহ হচ্ছে ৬৪ হাজার বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপন। খামার স্থাপনের মাধ্যমে ১ লাখ ২৮ হাজার কর্মসংস্থান সৃষ্টি।
এছাড়া ১ লাখ ৪৮ হাজার জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান ও কর্মশালা আয়োজ ও ১২৫ কোটি টাকার রিভলভিং ক্রেডিট ফান্ড পরিচালনা, যানবাহন ক্রয় যন্ত্রপাতি ক্রয়; এবং অন্যান্য কাজ পরিচালনা। দেশের ৬৪টি জেলার ৪৯২টি উপজেলা এটা নেওয়া হচ্ছে। প্রকল্প এলাকা নির্বাচনের যৌক্তিকতা বায়োগ্যাস প্লান্ট স্থাপনের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবদের কর্মসংস্থান এবং আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখবে বিবেচনায় দেশের ৬৪টি জেলার সকল উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে।
নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির আপত্তির মুখেও ১৭ শর্তে দেশে বিদেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস খোলার অনুমোদন দেওয়া হলো। মোনাস কলেজ (অস্ট্রেলিয়া) স্টাডি সেন্টারের শাখা স্থাপন ও পরিচালনার সাময়িক অনুমতি দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গত বৃহস্পতিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ বিদেশি প্রতিষ্ঠানটির শাখা ক্যাম্পাসের অনুমোদনের চিঠি জারি করেছে। দেশের সরকারি-বেসরকারি দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় থাকার পরও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজের অনুমোদন উচ্চশিক্ষার বাণিজ্য ও নৈরাজ্য আরও বেড়ে যাবে বলে সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপ-সচিব (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়-১) শামিমা বেগম স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রস্তাবিত স্টাডি সেন্টার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ এবং বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয় বা প্রতিষ্ঠানের শাখা ক্যাম্পাস বা স্টাডি সেন্টার পরিচালনার বিধিমালা, ২০১৪’ এ বর্ণিত সকল বিধি-বিধান ও শর্ত মেনে চলবে।
চিঠিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মতোই ২৫ হাজার বর্গফুট ফ্লোর এলাকা এবং প্রত্যেক শিক্ষার্থীর স্থান সংকুলান হয় এমন পর্যাপ্ত পরিমাণ শ্রেণিকক্ষ থাকতে হবে। স্টাডি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে নিজস্ব অথবা ভাড়া করা ভবনে অন্যূন ১০ হাজার বর্গফুট ফ্লোর এলাকা থাকতে হবে। পাঠদানের জন্য খ-কালীন শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে। বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কিত কমিশন অনুমোদিত একটি পরিকল্পনা থাকতে হবে। শিক্ষার্থী ভর্তি ফি, টিউশন ফি, ক্রেডিটের সংখ্যা, সেমিস্টারের অ্যাক্টিভিটি ফি এবং অন্যান্য ফি বাবদ ধার্য করা অর্থের মধ্যে উদ্যোক্তা, স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের আনুপাতিক অংশহারে স্থানীয় প্রতিনিধি ও বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে আনুপাতিক হারে বিভাজিত হতে হবে।
কমিশন নির্ধারিত তিন সদস্যের সমন্বয়ে একটি বোর্ড অব ট্রাস্টিজ থাকতে হবে। পাঠ্য তালিকায় কম্পিউটার সায়েন্স, ইঞ্জিনিয়ারিং বা প্রকৌশল বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকলে প্রতি পাঁচ জন শিক্ষার্থীর জন্য একটি কম্পিউটার এবং প্রাসঙ্গিক যন্ত্রপাতিসহ ল্যাবরেটরি স্থাপন করতে হবে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) অনুমোদনের শর্ত যথাযথ প্রতিপালনের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা হলেন এসটিএস গ্রুপের অ্যাডুকো বাংলাদেশ লিমিটেড।
প্রসঙ্গত, দেশে বর্তমানে ১০৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন রয়েছে।
মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির কর্মকর্তারা বলেন, সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে দেশে দেড় শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। আরও বেশ কিছু সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিটি জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। চালু থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষার্থী সংকট রয়েছে। এর মধ্যে বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ক্যাম্পাস পরিচালনার অনুমতি দেওয়া ঠিক হয়নি।