আন্তর্জাতিক ডেস্ক: গম ও অন্যান্য খাদ্যশস্য পাকার সময় ভারতের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে আরেকটি তীব্র তাপপ্রবাহ শস্যের ব্যাপক ক্ষতি করতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির কৃষকরা। তারা বলছেন, চলতি মাসের তাপপ্রবাহের ফলে দেশটির গম উৎপাদন টানা দ্বিতীয় বছরের মতো হ্রাস পেতে পারে।
গত বছর একই ধরনের তাপপ্রবাহের কারণে ভারতে গম ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পায়। যে কারণে দেশটির সরকার গম-আটা ও অন্যান্য কিছু খাদ্যশস্যের রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এর প্রভাব পড়ে বিশ্ববাজারে, লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে গম ও গমজাত অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম।
চলতি মার্চে দেশটির উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে তীব্র তাপপ্রবাহ শুরু হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন দেশটির আবহাওয়াবিদরা। এই তাপপ্রবাহের কারণে সময়ের আগেই গম পরিপক্ক হয়ে যেতে পারে। এর ফলে কমে যেতে পারে গমের উৎপাদন। গত বছর রপ্তানি নিষিদ্ধ করার পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম শস্য উৎপাদনকারী এই দেশটি এবার আমদানির অনুমতি দিতেও বাধ্য হতে পারে।
ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাজস্থানের কৃষক রামেশ্বর চৌধুরী তার নিওয়াই গ্রামে ছয় একর জমিতে গম চাষ করেছেন। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘শীত এখনও শেষ হয়নি; তারপরও দিনের বেলায় তাপমাত্রা গ্রীষ্মের মতো বেড়ে যায়।’
‘আমরা দাবদাহের প্রভাব সীমিত করার জন্য জমিতে সেচ দিচ্ছি। এর বাইরে আমরা আর কিছুই করতে পারি না।’
দেশটির আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গমের ব্যাপক উৎপাদন হয়, এমন কিছু অঞ্চলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ফেব্রুয়ারিতে কয়েক দিনের জন্য ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছিল; যা স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় প্রায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি।
চৌধুরী বলেন, উচ্চ তাপমাত্রার কারণে ফসল আগাম পরিপক্ক হয়ে যাবে। গত বছরের মতোই কুঁচকে যেতে পারে এসব শস্য।
গত ফেব্রুয়ারিতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে ভারতে। আবহাওয়া অফিস সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, মার্চ মাসে আরেকটি তাপপ্রবাহের সম্মুখীন হতে পারে দেশ। আর এই তাপপ্রবাহ দেখা দিতে পারে ভারতের গম উৎপাদনকারী মধ্য এবং উত্তরাঞ্চলীয় প্রধান প্রধান রাজ্যগুলোতে।
গোপীলাল জাত নামে দেশটির অপর একজন কৃষক বলেন, মার্চ মাসে তাপপ্রবাহ দেখা দিলে তা ফসলের আরও বেশি ক্ষতি করতে পারে। ইতিমধ্যে এই তাপপ্রবাহের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের পররাষ্ট্র কৃষি পরিষেবা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের মার্চে একই ধরনের তাপপ্রবাহের প্রভাবে ভারতের গম উৎপাদন কমে ১০ কোটি টনে দাঁড়ায়; যা স্থানীয় চাহিদার ১০ কোটি ৩৬ লাখ টনের তুলনায় কম।
গত মাসে ভারতের কৃষি বিভাগের এক পূর্বাভাষে চলতি বছর দেশটিতে গমের উৎপাদন ঘুরে দাঁড়াতে পারে বলে আশা প্রকাশ করা হয়। ওই সময় ২০২৩ সালে দেশটিতে গম উৎপাদন রেকর্ড ১১ কোটি ২২ লাখ টন হতে পারে বলে জানানো হয়। কিন্তু দেশটির বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো তাপপ্রবাহের কারণে গমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে।
গম ও আটা-ময়দা বাণিজ্যবিষয়ক ভারতের বেসরকারি সংস্থা রোলার ফ্লাওয়ার মিলার্স ফেডারেশনের (আরএফএমএফআই) সভাপতি প্রমোদ কুমার এস বলেছেন, মার্চে উচ্চ তাপমাত্রার কারণে গমের উৎপাদন ৪০ থেকে ৫০ লাখ টন কম হতে পারে। দেশজুড়ে চলতি বছর গমের উৎপাদন ১০ কোটি ৬ লাখ টন থেকে ১০ কোটি ৭ লাখ টন হতে পারে বলে আমরা ধারণা করছি।
বৈশ্বিক একটি বাণিজ্যিক সংস্থার সাথে ব্যবসা করা নয়াদিল্লিভিত্তিক একজন ডিলার বলেছেন, আমরা ১০ কোটি ৩ লাখ থেকে ১০ কোটি ৯ লাখ টন পর্যন্ত গমের উৎপাদনের প্রত্যাশা করছি। মার্চের স্বাভাবিক তাপমাত্রার তুলনায় যদি উচ্চ-তাপপ্রবাহ দেখা দেয়, তাহলে গমের উৎপাদন আরও কমে ১০ কোটি টন হতে পারে বলে জানান তিনি।
গমের উৎপাদন হ্রাস পেলে সরকার নির্ধারিত ক্রয়মূল্যের সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর ফলে কৃষকরা বেসরকারি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছে উচ্চ দামে গম বিক্রি করতে পারেন বলে মন্তব্য করেছেন ওই ডিলার।
২০২২ সালে ভারতের সরকারের গম কেনার লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। দেশটির সরকার গত বছর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ৫৩ শতাংশ গম কিনতে পেরেছিল। এর ফলে স্থানীয় বাজারে গমের দাম ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে ভারতের সরকারি খাদ্য সংস্থা (এফসিআই) নিজেদের মজুত থেকে ৫০ লাখ টন গম বাজারে ছেড়েছিল।
আরএফএমএফআইয়ের সভাপতি প্রমোদ কুমার বলেন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার সম্ভাব্য সবকিছুই করবে। প্রয়োজনে গম আমদানির অনুমতিও দিতে পারে সরকার।