নিজস্ব প্রতিবেদক: আওয়ামী লীগের ২২তম জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেওয়ার পর অনানুষ্ঠানিক কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় তিনি বলেন, এখানেই আমাদের উদ্বোধনী সেশন শেষ। দ্বিতীয় অধিবেশন হবে বিকেল ৩টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। সেখানে শুধুমাত্র কাউন্সিলর কার্ডধারীরা যেতে পারবেন। সেই অধিবেশনে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন হবে। নেতাদের নাম প্রস্তাব হবে। কাউন্সিলররা ভোট দেবেন। আজ থেকে আমাদের বিদায়, আমরা চাই নতুন নেতৃত্ব আসুক।
শনিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনে এসব কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
আওয়ামী লীগের রেওয়াজ অনুযায়ী দ্বিতীয় অধিবেশনে প্রথমে সভাপতির নাম প্রস্তাব করেন একজন নেতা। পরেআরেকজন নেতা তা সমর্থন করেন। এরপর সবার কণ্ঠভোটে পাস (অনুমোদন) হয় সেটি।
একই প্রক্রিয়ায় নির্বাচন করা হয় সাধারণ সম্পাদক। পরে বাকি পদগুলোতে নেতাদের নাম ঘোষণা করেন দলের নবনির্বাচিত সভাপতি। বেশিরভাগ সময় ৮১ সদস্যের কমিটিতে কিছু পদ খালি রাখা হয়। পরে পর্যায়ক্রমে পূরণ করা হয় শূন্য পদগুলো।
মূলত দ্বিতীয় অধিবেশন পরিচালনা করবেন নির্বাচন কমিশন। ২২তম সম্মেলনে এই দায়িত্বে রয়েছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, ড. মশিউর রহমান ও শাহাবুদ্দিন চুপ্পু।
এর আগে সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে যুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বিশ্ব নেতৃত্বের প্রতি যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানান তিনি। বলেন, যুদ্ধ চাই না। স্যাংশন চাই না। এগুলো বন্ধ করেন। সব দেশ স্বাধীন, তারা তাদের মতো চলতে পারবে, সে অধিকার তাদের আছে। যুদ্ধের ভয়াবহতা আমরা জানি।
এ সময় বাংলাদেশের ১৯৭১ সালের চিত্র তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, শিশু ও নারীর মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় সেখানে। অতএব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ করেন। তাদের উস্কানি দেওয়া বন্ধ করেন। এই যুদ্ধের কারণে অর্থনীতিতে বিপর্যস্ত অবস্থা।
স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের প্রত্যয় ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে এর প্রক্রিয়াও তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত দেখতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পিতাকে বলতে চাই, আপনার জনগণ আর অভুক্ত থাকবে না। কথা দিলাম।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করবে, আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে, সেটা করতে দিতে পারি না। আমরা চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলাম- নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু করবো। সেটা করেছি। বিমানবন্দর, সারাদেশে স্কুল-কলেজ, রাস্তাঘাট ও ব্রিজ করেছি। এর আগে কোনো সরকার কী পেরেছে ১০০ ব্রিজ একসঙ্গে করতে? কে পেরেছে? আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগই পারে।
ভোট দেওয়ার অধিকার আওয়ামী লীগ নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগেরই স্লোগান ছিল- ‘আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো।’ আমরা নির্বাচন কমিশন গঠন করে দিছি। তাদের আর্থিক সক্ষমতা তাদের হাতে দিয়ে দিছি। তারা যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে, সেই সুযোগ করে দিয়েছি। সবাইকে ভোটার আইডি কার্ড করে দিছি। ‘নির্বাচন কমিশন নিয়োগ আইন ২০২২’ করে দিয়েছি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের যদি ভোট চুরির নিয়ত থাকতো, তাহলে তো খালেদা জিয়ার মতো আজিজ মার্কা নির্বাচন কমিশন করতে পারতাম। আমরা সেটা করি নাই।
আওয়ামী লীগের সম্মেলনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এরকম এক সম্মেলনে আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে সভাপতি করা হয়। তখন ছেলেমেয়েদের দায়িত্ব রেহানার ওপর ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছিলাম। স্বাধীনতার সুফল যেন মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছায় সেটাই ছিল লক্ষ্য।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যাতে সরকারে না আসতে পারে, অনেক চেষ্টা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশের এতটুকু স্বার্থ কারো হাতে তুলে দেবো না, এটাই ছিল আমার প্রতিজ্ঞা।
সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম ও শোক প্রস্তাব পাঠ করেন দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।