নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে মেট্রোরেল যুগে প্রবেশ করলো বাংলাদেশ। বহুল প্রতীক্ষিত স্বপ্নের মেট্রোরেল উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মেট্রোরেলের প্রথম যাত্রী হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা টিকিট কেটে মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরার দিয়াবাড়ী স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করলেন। এ ভ্রমণে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গী হলেন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার দুই শতাধিক যাত্রী।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) দুপুর ১টা ৫৪ মিনিটে উত্তরা স্টেশন থেকে আগারগাঁওয়ের উদ্দেশ্যে মেট্রোরেলে চড়ে রওয়ানা হন প্রধানমন্ত্রী ও তার ভ্রমণসঙ্গীরা। প্রধানমন্ত্রী ও তার সফরসঙ্গীদের বহনকারী মেট্রোরেলের চালক ছিলেন মরিয়ম আফিজা।
প্রথম যাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর ভ্রমণসঙ্গী হয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্কুল কলেজ ও মাদরাসা শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম, পোশাককর্মী, রিকশা চালক, সবজি বিক্রেতা, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধি, ব্যবসায়ী আর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।
এর আগে দুপুর ১টা ৪০ মিনিটের দিকে রাজধানীর দিয়াবাড়ী (উত্তরা) স্টেশন থেকে মেট্রোরেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি সবুজ পতাকা নাড়িয়ে বাংলাদেশের প্রথম মেট্রোরেল চলাচলের আনুষ্ঠানিক যাত্রার শুভ সূচনা করেন। প্রথম ট্রেনটির চালক ছিলেন আসমা আক্তার।
সকালে মেট্রোরেলের উদ্বোধনের পর সুধী সমাবেশ শেষে দুপুর দেড়টায় মেট্রোরেলের উত্তরা উত্তর স্টেশনে গিয়ে ফটোসেশনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। পরে সেখানে বৃক্ষরোপণ করেন এবং দোয়া ও মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর অর্থ পরিশোধ করে মেট্রোরেলের টিকিট কাটেন তিনি। এসময় শেখ রেহানাও টিকিট কাটেন। পরে একে একে দুই শতাধিক সফরসঙ্গী টিকিট কাটেন।
এদিকে মেট্রোরেল উদ্বোধন ঘিরে সকাল থেকে উত্তরার দিয়াবাড়ী ও আগারগাঁও স্টেশনে উৎসুক মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকার বাইরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও অনেকে মেট্রোরেল দেখতে এসেছেন। সরকারের এ সাফল্যে তাদের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
এদিন বেলা পৌনে ১১টার দিকে মেট্রোরেলের এক নম্বর স্টেশন উত্তরা উত্তর স্টেশনে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। বেলা ১১টার দিকে উত্তরার ১৫ নম্বর সেক্টরের ‘সি’ ব্লকের মাঠে দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় এ বৃহৎ অবকাঠামো উদ্বোধন করেন তিনি।
এসময় জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিনুল্লা নুরী, মেট্রোরেল কোম্পানির এমডি এম এন সিদ্দিকসহ সরকারের পদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি ৯৯ লাখ টাকা ব্যয়ে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত ২১ দশমিক ১৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ চলছে জাপানের উন্নয়ন সংস্থা জাইকার সহযোগিতায়।
শুরুতে সীমিত পরিসরে উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলবে মেট্রোরেল। আগামীকাল বৃহস্পতিবার থেকে মেট্রোরেলে যাত্রী পরিবহন শুরু হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের ডিসেম্বর নাগাদ মেট্রোরেলে চড়ে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত যাতায়াত করা যাবে।
শুরুর দিকে মেট্রোরেল চলবে দিনে ৪ ঘণ্টা। সকাল ৮ থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চলার সময় ট্রেনগুলো মাঝপথে কোথাও যাত্রাবিরতি করবে না।
সরকার মেট্রোরেলের সর্বনিম্ন ভাড়া নির্ধারণ করেছে ২০ টাকা। উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া হবে ১০০ টাকা। প্রথম পর্যায়ে মেট্রোরেল যে অংশে চলাচল শুরু করবে, সেই উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে আগারগাঁও স্টেশন পর্যন্ত যাত্রীপ্রতি ভাড়া হবে ৬০ টাকা।
এছাড়া উত্তরা উত্তর স্টেশন থেকে উত্তরা সেন্টার (মধ্য) ও উত্তরা দক্ষিণ স্টেশনের ভাড়া হবে একই ২০ টাকা। উত্তরা উত্তর থেকে পল্লবী ও মিরপুর-১১ স্টেশনের ভাড়া ৩০ টাকা, মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনের ভাড়া ৪০ টাকা এবং শেওড়াপাড়া স্টেশনের ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ টাকা।