নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ নিয়ে বিদেশিদের ‘মাতব্বরি’ দরকার নেই বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। যুক্তরাষ্ট্রকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেছেন, ওনারা আগে নিজেদের আয়নায় দেখুক।
রোববার (৮ জানুয়ারি) দুপুরে সিলেট এম এ জি ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ই-গেট কার্যক্রমের উদ্বোধন শেষে মন্ত্রী এ কথা বলেন।
মন্ত্রী বলেন, ‘আমেরিকা (যুক্তরাষ্ট্র) ১৪ বারে স্পিকার নির্বাচিত করেছে। আমাদের দেশে তো এরকম কোনো ঝামেলা নাই। আমেরিকার ৮২ না ৭২ পার্সেন্ট (শতাংশ) জনগণ মনে করে আমেরিকার ডেমোক্রেসি খুব দুর্বল। আর রিপাবলিকান পার্টির ৭৭ পার্সেন্ট মনে করে যে, গত প্রেসিডেন্সি ইলেকশন ছিল ফ্রড ইলেকশন এবং দে হ্যাভ স্টোলেন দ্য ইলেকশন (তারা ভোট চুরি করেছে)। এই রকম তাদের মনমানসিকতা। আমাদের দেশেও কিছু লোক এই ধরনের আছে।’
ড. মোমেন বলেন, ‘ওই দেশে (যুক্তরাষ্ট্রে) অ্যাভারেজ কতজন লোকে ভোট দেয়? পঞ্চাশের (শতাংশ) নিচে ভোট দেয়। আর আমাদের দেশে ৭২, ৮০, ৯০ পার্সেন্ট লোকে ভোট দেয়। এই গাইবান্ধায় ৮৬ পার্সেন্ট ভোট পড়েছে। আমাদের দেশে ইলেকশন খুব স্বতঃস্ফূর্ত হয়। আনন্দময় হয়। ওইসব দেশে ইলেকশনের এক মাস আগে ক্যাম্পেইন শুরু হয়, আমাদের এক বছর আগেই শুরু হয়ে গেছে।’
তিনি বলেন, ‘যখন সত্তরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সরকার মেজরিটি পেলো, তাদেরকে সরকার গঠন করতে দিলো না। তখনই তো আমরা আন্দোলন শুরু করলাম। তারপর জেনোসাইড হওয়ার পর আমরা স্বাধীনতা ঘোষণা করলাম। এই দেশের (বাংলাদেশ) সৃষ্টি হয়েছিল গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য। এই দেশের প্রত্যেক মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এই প্রিন্সিপলগুলো আছে। সো আমাদের অন্যরা মাতব্বরি করে এই পরামর্শ দেওয়ার দরকার নাই। উনারা নিজেদের আয়নায় দেখুক।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা অঙ্গীকার করেছি, প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার করেছেন যে, আগামী নির্বাচন স্বচ্ছ, সুন্দর, গ্রহণযোগ্য এবং অংশগ্রহণমূলক, সবাইকে নিয়ে আমরা করতে চাই। আমরা অবশ্যই বিশ্বাস করি, আমার দল বিশ্বাস করে, আমার ভোট আমি দেবো, যাকে খুশি তাকে দেবো। এটা আমার স্লোগান।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করেছে। কোনোদিন মিলিটারি এনে বা অন্য কাসুন্দি করে সরকার হয় নাই।’
যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বাংলাদেশে আগামী জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ঘোষণা দিয়েছেন, এক্ষেত্রে নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়ে সরকারের অবস্থান জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘কোনো সমস্যা নেই। (বিদেশি পর্যবেক্ষক) আমরা অ্যালাউ করবো। উই হ্যাভ নাথিং টু হাইড (আমাদের গোপন করার কিছুই নেই)।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘অন্যরা মাতব্বরি করতে পারেন। কিন্তু দে শ্যুড ফলো আস, আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করেছে। সুতরাং ওই সম্পর্কে উনারা যে বিভিন্ন সন্দেহ পোষণ করেন, তাদের ইতিহাস সম্পর্কে অভিজ্ঞতার অভাব, জ্ঞানের অভাব। তারা হয়তো জিনিসগুলো ঠিকমতো পর্যবেক্ষণ করছেন না বলে অনেক সময় অনেকগুলো অবান্তর বক্তব্য দিয়ে থাকেন। আমি আশা করবো, তারা আমাদের ইতিহাস পড়ুক আর আমাদের চলার পথটা দেখুক। আমাদের দেশটাই হচ্ছে ডেমোক্রেসির একটা কেন্দ্রবিন্দু।’
এসময় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা বিভাগের সচিব মো. আব্দুল্লাহ আল মাসুদ চৌধুরী, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. নুরুল আনোয়ার, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জগদীশ চন্দ্র দাস উপস্থিত ছিলেন।