নিউজ ডেস্ক: সাধারণত প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়নের আগে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য বিদেশ ভ্রমণ করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। কিন্তু উল্টো চিত্র দেখা গেল রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) একটি প্রকল্পে। প্রকল্পের কাজ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা অর্জনে কাজ শেষে বিদেশ ভ্রমণে গেছেন ৮ কর্মকর্তা।
এই সফরকারী দলে আরডিএ’র সাবেক চেয়ারম্যানও আছেন। যিনি এখন আরডিএতেই নেই, প্রকল্পের জন্য তার বিদেশ ভ্রমণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিদেশ ভ্রমণে সরকারি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও অত্যন্ত গোপনে এই কর্মকর্তারা থাইল্যান্ড সফরে গেছেন। গোপনীয়তা রক্ষা করতে একসঙ্গে না গিয়ে তারা দুইভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেন বলেও জানা গেছে।
আরডিএ সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী শহরের মাস্টার প্ল্যান প্রকল্পের অধীনে মোট ৮ জন কর্মকর্তা থাইল্যান্ড সফরে গেছেন। অথচ কিছু দিন আগেই শহরের নতুন মাস্টার প্ল্যান প্রস্তুত হয়েছে। এই মাস্টার প্ল্যানে নতুনত্ব কিছুই নেই। শুধু পরিবেশের বিষয়টিকে নতুন করে সংযুক্ত করা হয়েছে।
বিদেশ যাওয়া ৮ জনের মধ্যে আরডিএর কর্মকর্তা ছয়জন। অন্য দুজন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা। আরডিএ’র ছয়জনের মধ্যে সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনওয়ার হোসেনও আছেন। তিনি এখন বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক। তিনি যখন আরডিএ’র চেয়ারম্যান ছিলেন, তখন ওই প্রকল্পের কাজ হয়। এখন আরডিএতে না থাকলেও তিনি কেন সফরে গেছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এই সফরকে বিলাসিতা বলছেন অনেকেই।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রথম দফায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি একসঙ্গে থাইল্যান্ড যান আরডিএ’র নগর পরিকল্পক আজমেরি আশরাফী, স্টেট অফিসার বদরুজ্জামান ও সাবেক চেয়ারম্যান মো. আনওয়ার হোসেন। দ্বিতীয় দফায় তিন দিন পর গত ৮ ফেব্রুয়ারি থাইল্যান্ড যান আরডিএ’র প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হায়াত মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল তারিক ও অ্যাসিস্ট্যান্ট টাউন প্ল্যানার রাহেনুল ইসলাম রনি। আরডিএ’র নিজস্ব খরচ নাকি ঠিকাদারের টাকায় তারা ভ্রমণে গিয়েছেন তা অবশ্য জানা যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরডিএ সূত্র জানায়, কর্মকর্তাদের কিছুদিন আগেই ২১ কোটি টাকার ওই প্রকল্পের অধীনে থাইল্যান্ড যাওয়ার কথা ছিল। করোনার কারণে তারা যেতে পারেননি। পরে বিদেশ ভ্রমণে সরকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে তাদের ভ্রমণও আটকে যায়। এরমধ্যেই প্রকল্পের অধীনে মাস্টার প্ল্যান তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। মো. আনওয়ার হোসেনকেও আরডিএ থেকে বদলি করে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। এরপরও তারা ওই প্রকল্পের অধীনে বিদেশ ভ্রমণে গিয়েছেন। কাজ শেষ হওয়া একটি প্রকল্পের অধীনে কেন তারা বিদেশ ভ্রমণে গেলেন তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন আরডিএ’র কর্মকর্তা-কর্মচারীরাই।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, প্রকল্পের অধীনে ২৪ বছরের জন্য রাজশাহীর উপর মাস্টার প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২১ কোটি টাকা। তিনটি প্রতিষ্ঠান এ মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। এর একটি প্রতিষ্ঠানের অধীনে আরডিএ’র নগর পরিকল্পক আজমেরী আফসারীর স্বামী চাকরি করেন। অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ পাইয়ে দিতে সহযোগিতা করেছিলেন আরডিএ’র ছয় কর্মকর্তা। তারা প্রকল্পের ভেতর একটি বিদেশ ভ্রমণও রেখেছিলেন।
শেষ হওয়া প্রকল্পের জন্য সাবেক চেয়ারম্যানসহ কর্মকর্তাদের বিদেশ ভ্রমণের যৌক্তিকতা নিয়ে কথা বলতে আরডিএ’র বর্তমান চেয়ারম্যান জিয়াউল হককে গতকাল রোববার সারাদিনে কয়েক দফা ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি। তাই এ ব্যাপারে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।