নিউজ ডেস্ক: গার্মেন্টস শ্রমিকদের ডরমিটরি নির্মাণ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুত প্রকল্প। বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহায়ন তহবিলের অর্থায়নে ডরমিটরি নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়।
স্বল্প সুদে এ ঋণ দিতে ৫৮ উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আবেদনও জমা নেওয়া হয়। কাজ চলছিল ঋণ বিতরণে। কিন্তু ছয় বছর পর জানা গেল, শ্রমিকদের ডরমিটরি নির্মাণে ঋণ দেওয়ার এখতিয়ারই ছিল না তহবিল কর্তৃপক্ষের।
এক অনুসন্ধানে এ তথ্য জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহায়ন তহবিল ও মুখপাত্রের দপ্তর তা নিশ্চিত করেছে।
তথ্যমতে, ২০১৩ সালের ১০ অক্টোবর গগৃহায়ন তহবিলের স্টিয়ারিং কমিটির ৩৯তম সভায় সিদ্ধান্ত হয় শ্রমিকদের ডরমিটরি নির্মাণে ২ শতাংশ সুদ হারে মালিককে ঋণ দেওয়ার। যে অর্থ মালিক তার নির্দিষ্ট সম্পদ বন্ধকের বিপরীতে গ্রহণ করবে এবং মধ্য-দীর্ঘ মেয়াদে পরিশোধ করবে। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তা তার নির্দিষ্ট শিল্প কারখানার সন্নিকটে শ্রমিকদের জন্য ডরমিটরি নির্মাণ করবেন। এ বিষয়ে গৃহায়ন নীতিমালাও প্রস্তুত করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকে অবস্থিত গৃহায়ন তহবিল এনজিওর মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষকে ঘর বানিয়ে দেওয়ার সরকারি কার্যক্রম। এ তহবিল ঘূর্ণায়মান। অর্থের পরিমান ২০০ কোটি টাকা। তহবিল এ কার্যক্রম এখনো চলমান। প্রধানমন্ত্রী এ তহবিল থেকে শ্রমিকদের আবাসন নির্মাণে বিজিএমইএ ভুক্ত মালিকদের স্বল্প সুদে এ ঋণ দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। কারখানা মালিকদের উৎসাহ দেখা গেলে এবং প্রয়োজন হলে এ তহবিলের পরিমান বাড়ানোর কথা ছিল।
জানা যায়, শ্রমিক কল্যাণের কথা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী ও শ্রমিকদের উৎসাহ ছিল। শ্রমিকদের নিশ্চিত আবাসনের চিন্তা থেকে সে সময় প্রধানমন্ত্রী এ ঘোষণা দেন। তৈরি পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকরা কারখানা থেকে বাসায় যাতায়াতে সমস্যায় ভোগেন। তাদের বসবাস সাধারণত কম ভাড়ার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। যা সুষ্ঠু উৎপাদনশীলতার পথেও অন্তরায়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে মালিকের তত্ত্বাবধানে স্বল্প সুদে দীর্ঘ মেয়াদি ঋণের ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।
নির্দেশনা মতো কাজ শুরু করে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহায়ন তহবিল কর্তৃপক্ষ। এ ঋণ নেওয়ার জন্য ৫৮ জন্য উদ্যোক্তা তহবিল সংগ্রহে আবেদন পত্র সংগ্রহ করেন। প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে ২৩ জন গ্রাহক আবেদনও করেন। কিন্তু এরপর থেকেই হিমঘরে চলে যায় শ্রমিকদের আবাসন নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার প্রকল্প।
বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৫ সাল পর্যন্ত এ বিষয়ে কাজ হলেও বিভিন্ন কারণে কার্যত অচল থাকে গৃহায়ন তহবিলের কার্যক্রম। শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গৃহায়ন তহবিল সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চায়। তহবিল কর্তৃপক্ষ জানায়, গৃহায়ন তহবিল সরকারের একটি অস্থায়ী প্রকল্প। অস্থায়ী কোনো প্রকল্পের মাধ্যমে স্থায়ী বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী সম্পদ বন্ধক রেখে তার বিপরীতে ঋণ প্রদানের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট, রিটেইনার আইনজীবী ও আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হয়। কিন্তু এ বিষয়ে কোনো ধরনের সুনির্দিষ্ট মতামত না পাওয়ার পরিপেক্ষিতে প্রস্তাবিত ঋণ প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়টি ২০২০ সালে স্থগিত রাখা হয়।
গার্মেন্টস শিল্প এলাকাগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তৈরি পোশাক শিল্পের প্রায় শতভাগ বসবাস কম ভাড়ার অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। যেখানে অল্প জায়গাতে অনেক শ্রমিকের বসবাস। যার অধিকাংশই কারখানা থেকে বেশ দূরে। কারখানায় যাতায়াতের জন্য বেতনের বড় অংশ যেমন চলে যায়, কারখানায় সময়মতো পৌঁছতে সময় ব্যয় হয় এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাসের কারণে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যহানির শিকার হতে হয়। কিছুদিন পর পর মূল্যস্ফীতির কারণে নিত্যপণ্য ও যাতায়াত খরচ বেড়ে যাওয়ায় প্রাপ্ত বেতন কমে যায়। শ্রমিকদের ডরমিটরির ব্যবস্থা করলে এ অবস্থা থেকে কিছুটা পরিত্রাণ পাওয়া যাবে। উৎপাদনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
শ্রমিকদের ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ট আন্তরিক। সে চিন্তা থেকেই তিনি ডরমিটরি নির্মাণে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। এটা বন্ধ হয়ে যাওয়ার বিষয়টি খুবই দুর্ভাগ্যজনক বলে মনে করেন গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্যলীগের সাধারণ সম্পাদ সরোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেটা শুরু করেছিলেন সেটা অব্যাহত থাকলে শ্রমিকদের বাসস্থানের প্রত্যাশা পূরণ হতো। পর্যায়ক্রমে সকল শ্রমিকের বাসস্থানের সমস্যা সমাধান হতো। শ্রমিকের আস্থা বাড়তো এবং মানসিকভাবে স্বস্তি পেতো। এটা একটি ভালো উদ্যোগ ছিল। এটা যখন শুরু হয়েছিল আমরা তখন খুশি হয়েছিলাম। তারপর কার্যক্রমটি দৃশ্যমান না হওয়া অত্যন্ত দুঃখজনক।
প্রধানমন্ত্রী জেনে-শুনে বুঝে একটি কথা বলেন। যেটা সময় উপযোগী এবং যুক্তিসংগত তিনি সেটাই বলেন, উল্লেখ করে সরোয়ার হোসেন বলেন, আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, শ্রমিকদের ডরমিটরি নির্মাণে তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন, সেটা সচল করতে তিনি যেন আবারও নির্দেশ দেন।