নিউজ ডেস্ক: দুদিন কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী থাকার পর শেয়ারবাজারে ফের টানা দরপতন দেখা দিয়েছে। সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবার (২ মার্চ) দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচক কমেছে। সেই সঙ্গে কমেছে লেনদেনে অংশ নেওয়া বেশি সংখ্যক প্রতিষ্ঠানের দাম। পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। এর মাধ্যমে টানা দুই কার্যদিবস পতনের মধ্যে থাকলো শেয়ারবাজার।
মূল্যসূচক ও লেনদেন কমার পাশাপাশি এদিন শেয়ারবাজারে ক্রেতা সংকটও দেখা যায়। ক্রেতা সংকটে পড়ে লেনদেনের শেষ দিকে প্রায় দুইশ প্রতিষ্ঠানের ক্রয়াদেশের ঘর শূন্য হয়ে পড়ে। অন্যদিকে দিনের সর্বনিম্ন দামে এসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল বিক্রির আদেশ আসে। এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট রয়েছে ক্রেতা সংকটে। ফলে যাদের কাছে এসব প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট রয়েছে, তারা ক্রেতা সংকটে তা বিক্রি করতে পারেননি।
এদিকে, ১৬৯ প্রতিষ্ঠানে নতুন করে ফ্লোর প্রাইস (সর্বনিম্ন দাম) নির্ধারণ করায় কয়েক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দামে বড় পতন হয়েছে। এর আগে এসব প্রতিষ্ঠানের ফ্লোর প্রাইস তুলে নিয়ে একদিনে দাম কমার সর্বনিম্ন সীমা এক শতাংশ বেঁধে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন ফ্লোর প্রাইস বেঁধে দিয়ে এই ১৬৯ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম কমার ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সার্কিট ব্রেকারের নিয়ম কার্যকর করা হয়েছে। ফলে ফ্লোর প্রাইসের ওপরে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার দাম একদিনে এক শতাংশের ওপরে কমার সুযোগ হয়েছে।
দিনের লেনদেন শেষে দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম ৯ শতাংশের ওপরে কমেছে। চার শতাংশের ওপরে দাম কমেছে আরও ৯টির। আর ১ শতাংশের বেশি দাম কমেছে ৪৬টি প্রতিষ্ঠানের। এছাড়া দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ১৯৮টি প্রতিষ্ঠানের ক্রয়াদেশের ঘর শূন্য পড়ে থাকতে দেখা যায়। এর মধ্যে ১৩৯ প্রতিষ্ঠান আগে থেকেই ফ্লোর প্রাইসে আটকে রয়েছে। আর নতুন করে ফ্লোর প্রাইসে এসে ঠেকেছে আরও ৩৮টি প্রতিষ্ঠান। ক্রেতাশূন্য হয়ে পড়ার তালিকায় একটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম এখনও ফ্লোর প্রাইসের ওপরে রয়েছে।
এমন ক্রেতা সংকট দেখা দেওয়ায় দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে ৭২ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখাতে পেরেছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৮৮টির। আর ১৪৯টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দাম বাড়ার তালিকায় থাকায় ৩২টির দাম বেড়েছে নতুন ফ্লোর প্রাইসের কারণে। দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখালেও এ ৩২টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের ক্রয়াদেশের ঘর লেনদেনের সিংহভাগ সময় শূন্য পড়ে থাকে।
দরপতনের তালিকা বড় হওয়ায় ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৯৪ পয়েন্ট কমে ছঢ হাজার ২১৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ২ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ২১৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর ডিএসই শরিয়াহ্ আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৪৬ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩৫৭ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সবকটি মূল্যসূচক কমার পাশাপাশি ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণও কমেছে। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪২৭ কোটি ৭২ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ২৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
টাকার অংকে বাজারটিতে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হয়েছে এডিএন টেলিকমের শেয়ার। কোম্পানিটির ৩৫ কোটি ৩৯ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা জেনেক্স ইনফোসিসের ২৬ কোটি ৯১ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। ২৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে সি পার্ল বিচ রিসোর্ট।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে- ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স, আমরা নেটওয়ার্ক, জেমিনি সি ফুড, শাইনপুকুর সিরামিকস, বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন, অলেম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ ও আলহাজ টেক্সটাইল।
অন্য শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই কমেছে ৫৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে আট কোটি ১৪ লাখ টাকা। লেনদেন অংশ নেওয়া ১০৮ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৮টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৭টির এবং ৪৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।