নিউজ ডেস্ক: জাপানের পর এবার সুইজারল্যান্ড থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দেশটি থেকে এক কার্গো বা ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানি করা হবে। এতে খরচ হবে ৬১৮ কোটি টাকা।
জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলার মাধ্যমে এই এলএনজি আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। বৃহস্পতিবার (৯ মার্চ) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সভা শেষে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে জানানো হয়, আজকের সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় সুইজারল্যান্ডের টোটাল ইঞ্জিনিয়ারিং গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার লিমিটেড থেকে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬১৮ কোটি ২১ লাখ ১৯ হাজার ৪১৯ টাকা। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অধীন পেট্রোবাংলার মাধ্যমে এই এলএনজি আমদানি করা হবে।
এর আগে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি জাপানের জেরা কোম্পানি এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া। সে সময় ব্যয় ধরা হয় ৬৯০ কোটি ৪২ লাখ ৯ হাজার ৩১২ টাকা। মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্চেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বা মিলিত বিক্রয়-ক্রয় চুক্তিতে (এমএসপিএ) স্বাক্ষর করা প্রতিষ্ঠান থেকে থেকে কোটেশন সংগ্রহ করে ওই এলএনজি আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে খরচ ধরা হয় ১৬ দশমিক ৫০ ডলার।
তার আগে গত ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হওয়া সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় স্পট মার্কেট থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্চেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বা মিলিত বিক্রয়-ক্রয় চুক্তিতে (এমএসপিএ) স্বাক্ষর করা প্রতিষ্ঠান থেকে থেকে কোটেশন সংগ্রহ করে ওই এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তার আগে ২০২১ সালের ২৩ জুন অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভায় চার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্চেজ অ্যাগ্রিমেন্ট বা মিলিত বিক্রয়-ক্রয় চুক্তির অনুমোদন দেওয়া হয়।
চলতি বছরের আগে পেট্রোবাংলা খোলাবাজার থেকে সর্বশেষ এলএনজি কিনেছিল গত বছরের মে মাসে। তখন প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম পড়েছিল ২৬ ডলার ৪ সেন্ট।
জানা গেছে, এলএনজি আমদানির জন্য বেশকিছু দেশের সঙ্গে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি রয়েছে। কিন্তু সরকার খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে এলএনজি আমাদিন করতে চাই। এ জন্য ২০১৯ সালে খোলা বাজার থেকে এলএনজি আমদানির লক্ষ্যে এমএসপিএ পরিকল্পনা নেওয়া হয়। তারই অংশ হিসেবে ২০২১ সালে জাপান, সিঙ্গাপুর, যুক্তরাজ্য এবং দুবাই- এর চার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাস্টার সেল অ্যান্ড পার্চেজ অ্যাগ্রিমেন্ট করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে গ্যাস সংকটের কারণে গত কয়েক বছর বাসাবাড়ির পাশাপাশি শিল্পেও নতুন সংযোগ বন্ধ রেখেছে সরকার। প্রাকৃতিক গ্যাসের সংকট বিবেচনায় ২০১৮ সালের ২৫ এপ্রিল এলএনজি আমদানি শুরু করে সরকার। সামিট এলএনজি ও যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলারেট এনার্জির স্থাপন করা ভাসমান টার্মিনালের (এফএসআরইউ) মাধ্যমে আমদানিকৃত এলএনজি সরবরাহ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, দেশে দৈনিক প্রায় ৪০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস চাহিদার বিপরীতে বর্তমানে কম-বেশি ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৪০-৪২ কোটি ঘনফুট এলএনজি থেকে রূপান্তরিত গ্যাস। তবে দেশে দৈনিক ১০০ কোটি ঘনফুট এলএনজি রূপান্তরের সক্ষমতা রয়েছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত স্পট মার্কেট থেকে দেশে ২৯ কার্গো এলএনজি আমদানি করা হয়েছে।
গত জুনে সিএনজি বাদে সব শ্রেণির গ্রাহকের জন্য গ্যাসের দাম বাড়িয়েছিল সরকার। চলতি বছরের জানুয়ারিতে শিল্প, বিদ্যুৎ ও বাণিজ্য গ্রাহকদের জন্য ফের গ্যাসের দাম বাড়ায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়।