নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানী ঢাকায় প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে জনসংখ্যা। কিন্তু সে অনুপাতে কোরবানীর হাটের সংখ্যা বৃদ্ধি তো পাচ্ছেই না, বরং বছর বছর কমছে। জরিপগুলো বলছে, কোটি জনসংখ্যার ঢাকা শহরে বছরে প্রায় ৬ লক্ষ মানুষ বৃদ্ধি পায়। কিন্তু আশ্চর্যজনক বিষয়, প্রতিবছর ঢাকা শহরে কোরবানীর হাটের সংখ্যা না বেড়ে আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে।
জানা যায়, ২০২১ সালে রাজধানীতে কোরবানীর ঈদ উপলক্ষে ২৫টি হাট বসে। ২০২২ সালে তা কমে ২১টিতে দাড়ায়। এ বছর আশ্চর্জনকভাবে মাত্র ১৬টি পশুর হাটের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। এরমধ্যে আফতাবনগরের হাটের দরপত্র উচ্চ আদালতের সিদ্ধান্তে স্থগিত হওয়ায় রাজধানীতে এবার মোট হাটের সংখ্যা দাড়িয়েছে মাত্র ১৫টি।
এদিকে হাটের সংখ্যা হ্রাস পাওয়ায় কোরবানীর পশুর দাম বৃদ্ধির পাওয়ার আশঙ্কা করছে রাজধানীবাসী। রাজধানীবাসী মুহম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, হাটের সংখ্যা যত কম হবে, শেষ মুহুর্তে হাটগুলো সিন্ডিকেট করে তত বেশি দাম হাকাবে। তাই এ বছর হাটগুলোতে পশুর দাম মারাত্মক বৃদ্ধি পেতে পারে। একইসাথে ক্রয়কৃত পশু বাসায় আনতে যাতায়াত খরচও বাড়বে। তাছাড়া শেষ মহুর্তে পশু ক্রয় করতে ক্রেতাদের যততত্র ছোটছুটির ফলে যানজট বাড়বে এবং হাটগুলোতেও প্রচণ্ড ভীড় হবে। ভীড় বেশি হলে চুরি, পকেটমার, মলম পার্টির দৌরাত্ম বাড়ার আশঙ্কা আছে। মুহম্মদ আমিনুল ইসলাম বলেন, পশুর দাম বাড়লে মত্তবিত্ত শ্রেণীর জন্য কোরবানী দেয়া কষ্টকর হবে। ফলে এবার রাজধানীতে পশু জবাইয়ের সংখ্যা হ্রাস পেতে পারে। যা দেশের অর্থনীতির জন্যও মোটেও সুখকর কোন বিষয় নয়।
জানা যায়, ঢাকার দুই সিটিতে হাট করার উপযোগী প্রায় শতাধিক মাঠ আছে। এর মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য-
১. ধূপখোলা মাঠ, ২. গোলাপবাগ মাঠ, ৩. মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খেলার মাঠ, ৪. বাংলাদেশ মাঠ (পাকিস্তান মাঠ), ৫. মরহুম হাজি আলম ঈদগাহ মাঠ, ৬. বালুর ঘাট ঈদগাহ মাঠ, ৭. লালবাগ শ্মশান খেলার মাঠ, ৮. ধানমন্ডি খেলার মাঠ, ৯. কলাবাগান খেলার মাঠ, ১০. খিলগাঁও খেলার মাঠ, ১১. গজমহল খেলার মাঠ, ১২. হাজারীবাগ খেলার মাঠ, ১৩. দেলওয়ার হোসেন খেলার মাঠ, ১৪. আমলিগোলা খেলার মাঠ, ১৫. রহমতগঞ্জ খেলার মাঠ, ১৬. সামসাবাদ খেলার মাঠ, ১৭. বাসাবো মাঠ, ১৮. বনানী মাঠ, ১৯. গুলশান মাঠ, ২০. বাসাবো বালুর মাঠ, ২১. সিদ্বেশরী খেলার মাঠ, ২২. মাদারটেক আব্দুল আজিজ মাঠ, ২৩. গোড়ান মাঠ, ২৪. মেরাদিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ, ২৫. ব্রাদার্স ক্লাব মাঠ, ২৬. এজিবি কলোনি হাসপাতাল জোনের অন্তর্গত ঈদগাহ মাঠ, ২৭. এজিবি কলোনি আল হেলাল জোনের অন্তর্গত ঈদগাহ মাঠ, ২৮. টিঅ্যান্ডটি কলোনি মাঠ, ২৯. মতিঝিল বালক উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, ৩০. দক্ষিণ খিলগাঁও ঝিলপাড় মাঠ, ৩১. রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব মাঠ, ৩২. শাহজাহানপুর রেলওয়ে মাঠ, ৩৩. শাহজাহানপুর ইসলামী, সপাতালের পেছনে মাঠ, ৩৪. আবু জর গিফারী কলেজের মাঠ, ৩৫. লেদার কলেজ মাঠ, ৩৬. ঝিগাতলা কলোনির মাঠ, ৩৭. নবাবগঞ্জ পার্ক, ইরানী কবরস্থানের খেলার মাঠ, ৩৮. আজিমপুর মিনি কমিউনিটি সেন্টারের সামনের মাঠ, ৩৯. মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টারের ভেতরের খেলার মাঠ, ৪০. মরহুম হাজী দেলোয়ার হোসেন খেলার মাঠ, ৪১. রহমত উল্লাহ স্কুলের ভেতরের মাঠ, ৪২. জমিলা খাতুন স্কুলের ভেতরের খেলার মাঠ, ৪৩. আজাদ মসুলিম ক্লাব মাঠ, ৪৪. কিল্লার মসজিদ মাঠ, ৪৫. শহীদ আ. আলিম খেলার মাঠ, ৪৬. ফরিদ উদ্দীন সিদ্দিকী উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, ৪৭. চৌধুরীবাজার সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের ভেতরে খেলার মাঠ, ৪৮. লালবাগ মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের খেলার মাঠ, ৪৯. ওয়েস্ট অ্যান্ড হাইস্কুলের ভেতরে খেলার মাঠ, ৫০. আজিমপুর কলোনির ভেতর বিভিন্ন খেলার মাঠসমূহ, ৫১. পলাশী আজাদ স্টাফ কোয়ার্টারের খোলা জায়গা খেলার মাঠ, ৫২. আজিমপুর গার্লস সরকারি স্কুল ও কলেজের ভেতরে মাঠ, ৫৩. আজিমপুর গার্লস সরকারি স্কুল ও কলেজের ভেতরে মাঠ, ৫৪. হাজি আ. গনি সরদার সরকারি বিদ্যালয়ের স্কুলের মাঠ, ৫৫. হোসেনী দালান রোড, আলিয়া মাদ্রাসা মাঠ, ৫৬. ফজলে রাব্বি মাঠ, বদরুন্নেছা মহিলা কলেজ মাঠ, ৫৭. সিরাজ উদ্দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, ৫৮. কে এম বসির উদ্দিন সরকারি স্কুল মাঠ, ৫৯. ইসলামবাগ ঈদগাহ মাঠ, ৬০. কুড়ারঘাট বালুর মাঠ, ৬১. পূর্ব রসুলপুর ৮ নং গলি মসজিদ মাঠ, ৬২. নূরজাহান স্কুল মাঠ, ৬৩. রাজার দেউড়ি স্কুল মাঠ, ৬৪. গোপী মোহন বসাক লেন মাঠ, ৬৫. নবাবপুর গভঃ স্কুল মাঠ, ৬৬. জিয়া মাঠ, ৬৭. আলমগঞ্জ রোডসংলগ্ন সিঅ্যান্ডবি খেলার মাঠ, ৬৮. দক্ষিণ ওয়ার্ড-৫০বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের মাঠ, ৬৯. দোলাইরপাড় হাইস্কুল মাঠ, ৭০. সিও অফিস মাঠ, ৭১. মিরপুর হারুন মোল্লা ঈদগাহ মাঠ, ব্লক-এ, সেকশন-১২, ৭২. সিটি ক্লাব মাঠ, মিরপুর, ঢাকা, ৭৩. শেরেবাংলা প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ (১৩ /সি), মিরপুর, ৭৪. দারুল উলুম মাদ্রাসা মাঠ সেকশন-১৪, মিরপুর, ঢাকা, ৭৫. বাউনিয়াবাঁধ ঈদগাহ মাঠ, মিরপুর, ৭৬. আদর্শনগর ঈদগাহ মাঠ, মিরপুর, ঢাকা, ৭৭. মিরপুর বাংলা উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, মিরপুর, ৭৮. কালশী ইসলামিয়া উচ্চবিদ্যালয় মাঠ, মিরপুর, ৭৯. মিরপুর মুকুল ফৌজ মাঠ, ৮০. মিরপুর।৬-এর সি বাজারসংলগ্ন ঈদগাহ মাঠ, ৮১. ন্যাশনাল বাংলা স্কুলমাঠ, মিরপুর, ৮২. রূপনগর মনিপুর স্কুলমাঠ, মিরপুর, ঢাকা, ৮৩. আল-নুরী মসজিদ মাদ্রাসা মাঠ, মিরপুর, ঢাকা, ৮৪. চিড়িয়াখানা রোডস্থ ঈদগাহ মাঠ, ৮৫. বোটানিক্যাল গার্ডেন হাইস্কুল মাঠ, মিরপুর, ৮৬. মানিকদী আদর্শ বিদ্যানিকেতন স্কুলমাঠ, মিরপুর. ৮৭. ধামালকোট বিআরপি মাঠ, ৮৮. কালাচাঁদপুর হাইস্কুল মাঠ, ৮৯. কালাচাঁদপুর বালুর মাঠ, ৯০. মহাখালী আমতলী খেলার মাঠ, ৯১. মহাখালী টিঅ্যান্ডটি খেলার মাঠ, ৯২. তিতুমীর কলেজ খেলার মাঠ, ৯৩. বাড্ডা বালুর মাঠ হাইস্কুল-সংলগ্ন মাঠ, ৯৪. সালামবাগ মসজিদ-সংলগ্ন মাঠ, পূর্ব রামপুরা, ৯৫. একরামুন্নেছা উচ্চবিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠ, পশ্চিম রামপুরা, ৯৬. খিলগাঁও চৌধুরীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-সংলগ্ন মাঠ, ৯৭. বিজি প্রেস হাইস্কুল-সংলগ্ন মাঠ, ৯৮. রাজধানীর তেজগাঁওয়ে কলোনি বাজার এলাকায় ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের খেলার মাঠ, ৯৯. ওয়ার্ড-২৫: হোসেন আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজের মাঠ, ১০০. পশ্চিম নাখাল পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ, ১০১. শাহীনবাগ স্টাফ ওয়েলফেয়ার স্কুল-সংলগ্ন মাঠ, ১০২. আজরতপাড়া জামে মসজিদসংলগ্ন মাঠ, ১০৩. ওয়ার্ড-৩৫: ইস্পাহানী স্কুলমাঠ, ১০৪. ওয়ার্ড-৩৫ প্রভাতী স্কুলমাঠ, ১০৫. মধুবাগ মাঠ, ১০৬. গোলারটেক ঈদগাহ মাঠ, ১০৭. পুরাতন গাবতলী মসজিদ মাঠ, ১০৮. কল্যাণপুর ১৩ নং রোড প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ (কল্যাণপুর), ১০৯. বশিরউদ্দিন স্কুল মাঠ (আহম্মদনগর পাইকপাড়া), ১১০. মনিপুর স্কুলের ভেতরের মাঠে (মনিপুর এলাকা), ১১১. মনিপুর বয়েজ স্কুলের মাঠ (মনিপুর এলাকা), ১১২. পীরেরবাগ ছিদ্দিকীয়া মাদ্রাসা মাঠ (পীরেরবাগ), ১১৩. ওয়ার্ড-১৪: সেনপাড়া ঈদগাহ মাঠ (সেনপাড়া), ১১৪. ১৪ নং ঈদগাহ মাঠ (ইব্রাহীমপুর), ১১৫. মনিপুর স্কুল মাঠ (ইব্রাহীমপুর), ১১৬. কাফরুল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠ (ইব্রাহীমপুর), ১১৭. হিন্দোল, শতদল, কল্লোল সরকারি কোয়ার্টার। ঈদগাহ মাঠ (বিজ্ঞান জাদুঘরের সামনে), ১১৮. জান্নাতবাগ মাঠ, বিজলী মহল্লা (মোহাম্মদপুর এলাকা), ১১৯. চাঁদের হাট মাঠ, জহুরী মহল্লা (মোহাম্মদপুর এলাকা), ১২০. ওয়ার্ড-৩১: ঈদগাহ মাঠ-শেরশাহশুড়ি রোড (মোহাম্মদপুর), ১২১. ওয়ার্ড-৩২: হুমায়ুন রোড মাঠ, হুমায়ুন রোড, মোহাম্মদপুর, ১২২. পিসি কালচার মাঠ-আশা টাওয়ারের পেছনে: মোহাম্মদপুর, ১২৩. ওয়ার্ড-৩৪: বৈশাখী মাঠ, রায়েরবাজার, রায়েরবাজার এলাকা।
রাজধানীবাসী মনে করেন, হাটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে হাটগুলো সিন্ডিকেট করে পশুর দাম বৃদ্ধি করতে পারবে না। এছাড়া এলাকাভিত্তিক এ সমস্ত মাঠে ছোট আকারে হাট বসলে যে যার বাড়ির কাছের হাট থেকে পশু ক্রয় করতে পারবে। এতে পশুর দামও কমবে এবং যাতায়াত ভাড়াও কমবে। এছাড়া কাছের হাট থেকে পশু ক্রয় করায় যানজটের আশঙ্কাও হ্রাস পাবে। তাই রাজধানীবাসী জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সমন্বয় করে পশুর হাট বৃদ্ধি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।