নিজস্ব প্রতিবেদক: মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) পণ্য ও বাণিজ্যিক সেবা রপ্তানির শতকরা হিসাবে গত কয়েক বছর ধরে স্বল্পোন্নত (এলডিসি) ৪৬ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অবস্থান করছে নিচের সারিতে।
চলতি বছরের ওয়ার্ল্ড ট্রেড স্ট্যাটিস্টিক্যাল রিভিউ অনুসারে, ২০২২ সালে এটি ছিল ১২.৫ শতাংশ, যা গত ১২ বছরে ২.৩ শতাংশ কমেছে।
জিডিপি হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে একটি দেশের পণ্য ও পরিষেবার আর্থিক মূল্য।
জিডিপিতে বাণিজ্যিক পরিষেবা রপ্তানি ০.৯ শতাংশ থেকে বেড়ে ১.২ শতাংশ হলেও পণ্য রপ্তানি ১৩.৯ শতাংশ থেকে কমে ১১.৩ শতাংশ হয়েছে।
স্বল্পোন্নত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৩০তম। ২০১০ সালের পর দেশটি মাত্র এক ধাপ এগিয়েছে।
১৪২.৩ শতাংশ নিয়ে পূর্ব আফ্রিকার দেশ জিবুতি তালিকার শীর্ষে আছে। এরপর আছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ কম্বোডিয়া ও লাওস, আফ্রিকার দক্ষিণাঞ্চলীয় দেশ মোজাম্বিক ও জাম্বিয়া ও পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনি।
তালিকার নিচের দিকে আছে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশ তিমুর—লেস্তে, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দ্বীপদেশ তুভালু, পূর্ব আফ্রিকার দেশ বুরুন্ডি, মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন, মধ্য আমেরিকার সংঘাতপীড়িত ক্যারেবীয় দ্বীপ হাইতি ও দক্ষিণ এশিয়ার নেপাল।
বিশ্লেষকরা নিম্ন অনুপাতের জন্য রপ্তানিকৃত দেশের সংখ্যা কমের পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যের বৈচিত্র্যের অভাবকে দায়ী করেছেন।
২০২৬ সালে জাতিসংঘের স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার কথা আছে।
‘এটি দেশের অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ নয়’ উল্লেখ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের ফেলো অধ্যাপক মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, তবে এটা সত্য যে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য বেড়েছে।
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির গতি অনুপাতে রপ্তানি বাড়েনি। ফলে জিডিপির সঙ্গে রপ্তানির অনুপাত কমেছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরও বলেন, মোট রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ গার্মেন্টস খাত থেকে আসায় দেশের রপ্তানির পরিধি খুবই ছোট।
তার মতে, রপ্তানির তুলনায় স্থানীয় বাজারে বিক্রিকে বেশি লাভজনক করে তোলে এমন নীতিমালার পাশাপাশি কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রে কাঠামোগত প্রতিবন্ধকতা ও কমপ্লায়েন্সের বিষয়গুলো রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে প্রধান বাধা।
‘এটি নতুন বিষয় নয়। এ নিয়ে অনেক কথা বলছি। কিন্তু কাজগুলো শম্বুক গতিতে এগোচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজার ছোট। ভারতের মতো বড় নয়। শুধুমাত্র অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপর নির্ভরতা জাতির অর্থনৈতিক উন্নয়নের ইচ্ছা পূরণে সহায়তা করবে না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, বছরের পর বছর ধরে দেশের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমছে। এটি আমাদের অর্থনীতির জন্য অনুকূল নয়।